পেট্রোল মজুদের হিড়িক

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২০ নভেম্বর, ২০২১ at ৭:০৩ পূর্বাহ্ণ

ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকে হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে পেট্রোলের চাহিদা। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর পেট্রোলের দাম বাড়বে এমন শঙ্কায় চট্টগ্রামসহ দেশজুড়ে অসংখ্য সিন্ডিকেট পেট্রোল মজুদে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশিমূল্যে কিনে কম মূল্যে বিক্রি করার কারণে বড় অংকের ভর্তুকি গুণতে হতো বিপিসিকে। কিন্তু পেট্রোলে তেমন ভর্তুকি গুণতে হয় না। ফলে ডিজেলের দাম বাড়লেও পেট্রোলের দাম বাড়ানোর কোন পরিকল্পনাও নেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের।
জানা গেছে, গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বিরাট অংকের ভর্তুকি গুণতে হয় বিপিসিকে। আন্তর্জাতিক বাজারে পরিশোধিত ডিজেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৭২ ডলার হলে বাংলাদেশে আমদানির পর তা বিক্রি করলে লাভ কিংবা লোকসান হয় না। গত ২৭ মে’র পর থেকে ব্রেক ইভেন্ট ছাড়িয়ে যায় ডিজেলের দাম। পরবর্তীতে অক্টোবর মাসের শেষে পরিশোধিত ডিজেল ব্যারেলপ্রতি ৯৫ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এতে করে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল বিক্রি করে নভেম্বর মাসের প্রথম তিনদিন পর্যন্ত দিনে ২০-২২ কোটি টাকা লোকসান দিচ্ছিল বিপিসি। যে কারণে সরকার ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপ নেয়। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করলে কম দামের কেরোসিন কিনে ডিজেলের সাথে মিশিয়ে বাজারজাত করার সুযোগ নেবে তেল ব্যবসায়ী কিছু চক্র। যে কারণে গত ৩ নভেম্বর দিবাগত মধ্যরাত থেকে একসাথে ডিজেল ও কেরোনিসের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে দেয় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিন প্রতি লিটার ৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ডিজেলের দাম বৃদ্ধির পর আবার পেট্রোল অকটেনের দাম বৃদ্ধি করতে পারে এমন আশংকায় দেশজুড়ে পেট্রোলের চাহিদা বেড়ে যায় অস্বাভাবিকভাবে। সাধারণত প্রতিদিন ১ হাজার মেট্রিক টন পেট্রোলের চাহিদা থাকলেও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির দুইদিন পর পরিবহন ধর্মঘটের মধ্যেও প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন পেট্রোল সরবরাহ নেয় সারাদেশের ডিলার ডিস্ট্রিবিউটররা।
বিপিসির কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে ইস্টার্ন রিফাইনারি রক্ষণাবেক্ষণজনিত মেরামতের কারণে তেল পরিশোধন বন্ধ রয়েছে। আবার পেট্রোল সরবরাহকারী দেশিয় ১২টি ফ্রাকশনেশন প্লান্টও বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে ডিজেল ও অকটেন আমদানি করা হলেও বিদেশ থেকে পেট্রোল আমদানি করা হয় না। এমধ্যে পরিবহন ধর্মঘটের মাঝেও হঠাৎ চাহিদা বেড়ে দ্রুতই কমতে থাকে পেট্রোলের মজুদ।
বিপিসি সূত্রে জানা গেছে, দেশে বছরে কমবেশি ৬০ লক্ষ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলের চাহিদা থাকে। তন্মধ্যে ১৫ লক্ষ মেট্রিক টন ক্রুড পরিশোধন করা হয়। অবশিষ্ট ৪৫ লক্ষ টন পরিশোধিত জ্বালানি আমদানি করে বিপিসি। অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে দেশে বছরে ৩ লক্ষ থেকে ৩ লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিক টন পেট্রোলের চাহিদা রয়েছে। এসব পেট্রোল দেশিয় উৎস থেকে সংগ্রহ করে বিপিসি। তাছাড়া জ্বালানির চাহিদা মেটানোর জন্য দেশে নিয়মিতভাবে ৪৫ দিনের জন্য জ্বালানি মজুদ রাখে বিপিসি। গত দুই সপ্তাহে অস্বাভাবিক চাহিদার কারণে সর্বশেষ বুধবার পেট্রোলের মজুদ ১৫ হাজার টনে নেমে আসে। তাছাড়া গত সপ্তাহের প্রথম পাঁচ দিনে দৈনিক ১৩শ থেকে ১৬শ মেট্রিক টন পেট্রোল বিক্রি করে বিপিসি। এতে করে বর্তমান চাহিদায় এ মজুদে ১০-১৩ দিন চলতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ মেহদী হাসান বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজ কার্যালয়ে দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘দেশে পেট্রোলের কোনো সংকট নেই। ইস্টার্ন রিফাইনারি বন্ধ থাকলেও তারা আমাদের পূর্বাভাসমতো পেট্রোল মজুদ রেখেছে। মূলত ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির পর জ্বালানি ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশংকা ছিল পেট্রোলের দাম বাড়বে। এতে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী পেট্রোল মজুদের দিকে ঝুঁকেছে।’ তিনি বলেন, ‘ডিজেলের ক্রয় মূল্যের চেয়ে বিক্রি মূল্যের অনেক তফাৎ ছিল। লোকসান ছিল বেশি। তাই ডিজেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু পেট্রোলের ক্রয় মূল্য ও বিক্রি মূল্য প্রায় কাছাকাছি, পেট্রোলের কোনো ভর্তুকি দিতে হচ্ছে না। ফলে পেট্রোলের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ কিংবা পরিকল্পনা নেই।’ চলতি সপ্তাহ থেকে পেট্রোল সংগ্রহ ও মজুদের প্রবণতা কমে যাবে বলে আশা সরকারের এ যুগ্ম সচিবের।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুনিদের মদদেই প্রমাণ, ‘তারা’ বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত : শেখ হাসিনা
পরবর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় আগুনে পুড়ল ৬ দোকান