পেটে ডিম নিয়ে কক্সবাজার সৈকতে গতকাল মঙ্গলবার একদিনে ভেসে এলো ৫টি মা কাছিমের মৃতদেহ। এ নিয়ে গত সাত দিনে ধারাবাহিকভাবে তিনটি ডলফিন, একটি পরপইস ও অন্তত ২৭টি কাছিমের মরদেহ ভেসে এসেছে বলে জানান সমুদ্রবিজ্ঞানীরা। আর নজিরবিহীন এই ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে পরিবেশবাদী মহলের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজার শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনারপাড়া সমুদ্র সৈকতে তিনটি ও হিমছড়ি সৈকতে দুটি কাছিমের মৃতদেহ ভেসে আসে। অলিভ রিডলি জাতের এ কাছিমগুলো উদ্ধার করে ময়না তদন্ত করা হয়। ময়না তদন্তকালে প্রায় প্রত্যেকটি কাছিমের পেটে ডিম পাওয়া যায়।
এর আগে সোমবার সকালে হিমছড়ি সৈকতে একটি, রোববার সকালে সোনারপাড়া সমুদ্র সৈকত ও রেজু নদী মোহনায় ২টি, এর আগের দিন শনিবার সন্ধ্যায় একই সৈকতে এবং দুপুরে হিমছড়ি সৈকতে দুটি মা কাছিমের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ওগুলোর পেটেও ডিম ছিল।
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম জানান, এ নিয়ে গত সাত দিনে তিনটি ডলফিন, একটি পরপইসসহ চারটি স্তন্যপায়ী প্রাণী ও অন্তত ২৭টি কাছিমের মৃতদেহ ভেসে এসেছে।
নজিরবিহীন এই ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে পরিবেশবাদী সংগঠন প্রকৃতি অধ্যয়নসহ বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে। ২০১২ সালের বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে সামুদ্রিক কচ্ছপ, স্তন্যপায়ী প্রাণী ডলফিন ও পরপইস সংরক্ষিত প্রজাতি হিসেবে তালিকাভুক্ত। এগুলো শিকার করা, খাওয়া, অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ পরিবহন ও ক্রয়বিক্রয় করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
সাগরে ডলফিন, পরপইস ও তিমিসহ স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিশাল পরিবেশগত সেবার কারণে এদেরকে ইকোসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ার বা বাস্তুসংস্থান প্রকৌশলী বলা হয়। এরা তাদের স্বভাবজাত বা আচরণগত প্রকৌশলের মাধ্যমে শুধু নিজেদের বসবাসের পরিবেশ ঠিক রাখে না, অন্য প্রাণীদের জন্যও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়। যে কারণে যে পরিবেশে এরা বসবাস করে সেই পরিবেশকে একটি উর্বর, জীববৈচিত্র্যসমৃদ্ধ নির্মল পরিবেশ হিসেবে ধরা হয়। আর একটি স্বাস্থ্যকর সমুদ্রের প্রয়োজনীয় অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত সী–টার্টল বা সামুদ্রিক কচ্ছপ। এরা সামুদ্রিক ঝাড়ুদার নামেও পরিচিত। সমুদ্রের পচা–গলা বস্তু খেয়ে এরা দূষণ পরিষ্কার করে।
একযোগে ডিম পাড়তে আসার জন্য বিখ্যাত অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙা প্রজাতির এই সামুদ্রিক কাছিমগুলো সৈকতের বালিয়াড়িতে ডিম পাড়তে আসার পথে জেলেদের জালে আটকা পড়ে অথবা অন্য কোনোভাবে আহত হয়ে মারা গেছে এবং পরে সৈকতে ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছেন সমুদ্রবিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে চলতি মৌসুমে অন্তত ৫৪টি কাছিমের মৃতদেহ ভেসে আসে বলে জানান তারা।
