কক্সবাজারের পেকুয়ায় মাঝরাতে সন্ত্রাসীদের এলোপাতাড়ি গুলিতে ৪ সন্তানের জননী সেলিনা আক্তার (৩৭) নামে এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন।
গতকাল রবিবার (১১ এপ্রিল) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের বুধামাঝির ঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত গৃহবধূ ওই এলাকার ফরিদুল আলমের স্ত্রী। এ
ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছাত্র নাজমুস সাকিব (২৩) ও সাইফুল ইসলাম (২৫) নামের দুই তরুণ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গুলিবিদ্ধ দুই তরুণকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেকে) পাঠানো হয়েছে।
আহত চবি শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব একই এলাকার মো. সেলিমের পুত্র এবং অপর আহত তরুণ সাইফুল ইসলাম) ওই এলাকার নুুরুল আবছারের ছেলে। আহতদের মধ্যে চবি শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিবের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এদিকে গুলি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা ২ সন্ত্রাসীকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে বলে থানা সূত্র নিশ্চিত করেছে।
আটকরা হলো স্থানীয় হোসেনের ছেলে মাহামুদুল করিম ও মফিজুর রহমান।
এদিকে, আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) তৌফিকুল আলম, পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুর রহমান মজুমদার ও ইউপির চেয়ারম্যান মওলানা বদিউল আলম জিহাদী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ঘটনায় আজ থানায় একটি হত্যামামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলা নং-০২ তারিখ: ১২/০৪/২০২১ ইং।
দুই পক্ষের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে হতাহতের এ ঘটনা ঘটেছে বলে বিভিন্ন সূত্রের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী ছরওয়ার উদ্দিন, জেসমিন আক্তার, সোলতানা, রেহেনা, রাবেয়া সহ আরো অনেকে জানান, বুধামাঝির ঘোনা এলাকার নুরুল ইসলাম গং ও মুহাম্মদ হোসেন গংদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এক একর জমির দখল বেদখল নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। বিরোধীয় জমির উপর দিয়ে গ্যাস লাইন যাওয়ায় ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যকার বিরোধ আরো চরম আকার ধারণ করে।
নিহতের পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, ঘটনার রাতে মোহাম্মদ হোসেন গং এর ৩০/৩৫ জন সন্ত্রাসী সশস্ত্র অবস্থায় কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে নুরুল ইসলাম গং এর লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এক গ্রুপ নুরুল ইসলামের বসতবাড়িতে হামলা চালিয়ে লোকজনকে জিম্মি করে রাখে এবং অপর গ্রুপ বিরোধীয় জমিতে ঘর নির্মাণের চেষ্টা চালায়। এসময় আতংক ছড়াতে সন্ত্রাসীরা প্রথমে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
নিহত গৃহবধূ সেলিনা আক্তারের স্বামী ফরিদুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, “গভীর রাতে হঠাৎ গুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। পরে ঘর থেকে বের হয়ে দেখি, কয়েকজন অস্ত্রধারী আমার গোয়ালঘর থেকে গরু লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এসময় আমার স্ত্রী সেলিনা তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে হুট করেই তাকে গুলি করে দেয়। সাথে সাথেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে পেকুয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তারা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।”
স্থানীয়রা জানান, এসময় পাশের বাড়ি থেকে কী ঘটনা দেখতে এলে চবি শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব ও সাইফুল ইসলামও গুলিবিদ্ধ হন।
এ বিষয়ে পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কানন সরকার বলেন, “জমি দখল-বেদখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সেলিনা আক্তার নামের এক গৃহবধূ নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।” এ ঘটনায় দুইজনকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
