পেকুয়ার পাহাড়ি এলাকায় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নেজাম উদ্দিন (৪২) নামে এক কাঠ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি উপজেলার বারবাকিয়া ইউনিয়নের পূর্ব ভারওয়াখালী এলাকার ছবির আহমদের পুত্র। স্বজনদের অভিযোগ, হত্যার পর কুপিয়ে নেজামের মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে পূর্ব ভারওয়াখালীর দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৮ জনকে আসামি করে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী শারমিন বেগম শামিনা। আজাদীকে তিনি বলেন, আমার স্বামী কাঠের ব্যবসা করতেন। প্রতিদিনের মত পাহাড়ে তার ব্যক্তিগত মালিকানাধীন গাছ পাহারা দিতে যান। কিন্তু ঘটনার রাতে বারবাকিয়া ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ২ নং ওয়ার্ডের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা চালায়। তিনি জানান, গুলি চালিয়ে তার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। পরে মাথায় দা দিয়ে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে সন্ত্রাসীরা।
বিষয়টি নিশ্চিত করে পেকুয়া থানার উপপরিদর্শক সাইফুর রহমান জানান, নিহতের বুকে ও বুকের দুই পাশে গুলির চিহ্ন রয়েছে। মাথায় দায়ের কোপের আঘাত রয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় জোবায়ের আহমদ নামে অপর এক ব্যক্তি আহত হলেও আইনি জটিলতার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে চাইছেন তার স্বজনরা। অপরদিকে বেশ কিছুদিন ধরে নেজামকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ তার পরিবারের।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে খুন, ধর্ষণসহ ৩০টির অধিক মামলা রয়েছে। বনদস্যু হিসেবেও খ্যাতি রয়েছে তার। একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকারি দলের রাজনীতির ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস করে না কেউ।
জানা গেছে, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীর আলমের ভাই আলমগীর তার স্ত্রী সালমাকে পিটিয়ে হত্যা করেন। কিন্তু পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন তিনি। ওই মামলায় জাহাঙ্গীর আলমকেও আসামি করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন জানিয়েছেন, অস্ত্রের জোরে ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের পদ ভাগিয়ে নিয়েছেন জাহাঙ্গীর। একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতিও তিনি। এলাকায় তার ‘সন্ত্রাসী বাহিনী’ রয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
অবশ্য এ বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলমের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অনেকবার তার নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে তাকে নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি বারবাকিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা বদিউল আলম জিহাদী। তবে স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, নিহত কাঠ ব্যবসায়ী নেজাম একসময় বনদস্যু জাহাঙ্গীর আলমের সহযোগী ছিলেন। পরে পক্ষ ত্যাগ করে তিনি বিদেশে পাড়ি জমান। দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরে এলে গাছের ব্যবসা শুরু করেন নেজাম। এরপর শুরু হয় গুরু-শিষ্যের দ্বন্দ্ব। পাহাড়ি এলাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ঘটনার দিন জাহাঙ্গীর বাহিনীর আবুল কালামের সাথে কথা কাটাকাটি হয় নেজামের। এর জের ধরেই তিনি খুন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে গতকাল শনিবার সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পেকুয়া-চকরিয়া সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) তফিকুল আলম। পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) কানন সরকার বলেন, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কঙবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী ৮ জনকে আসামি করে থানায় একটি এজহার দিয়েছেন। এটি মামলা হিসেবে রেকর্ডের কাজ চলছে।
হত্যাকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তবে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা তথ্য পেয়েছি।