পেকুয়ায় পিটুনিতে একজনের মৃত্যু, অন্যজন মৃত্যুশয্যায়

চকরিয়ায় আদালতে যাওয়ার পথে দুই আসামিকে অপহরণ

চকরিয়া প্রতিনিধি | বৃহস্পতিবার , ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪ at ৬:৩৪ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের চকরিয়ায় বাড়ি থেকে আদালতে আইনি হেফাজতে যাওয়ার পথে একটি হত্যা মামলার দুই আসামিকে সিএনজি টেক্সিতে তুলে অপহরণ করে পাশ্ববর্তী পেকুয়ায় অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাদেরকে দিনভর জিম্মি করে বেধড়ক পেটানো হয়। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে সন্ত্রাসীরা

দুইজনকে ফেলে দেয় পেকুয়ার সড়কের ধারে। তন্মধ্যে ধলা মিয়া প্রকাশ দানু মিয়া (৫০) নামে একজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে পটিয়ার ইন্দ্রপুল এলাকায় মারা যান। মো. মুবিন (২৫) নামে অপর একজন পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মৃত্যুশয্যায় রয়েছেন।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে চকরিয়ার পূর্ব বড় ভেওলার লাল ব্রিজ নামক স্থান থেকে জোরপূর্বক দুইজনকে অপহরণ করে সিএনজি টেক্সিতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পার্শ্ববর্তী পেকুয়া উপজেলা সদর এলাকায়। সেখানে অজ্ঞাত স্থানে দিনভর পিটুনির পর সন্ধ্যার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় সড়কের ধারে ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। এর পর খবর পেয়ে পেকুয়া থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করে নিয়ে যায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পিটুনিতে মারা যাওয়া ব্যক্তি ধলা মিয়া প্রকাশ দানু মিয়া মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের মা হারা পাড়ার মো. কলমদরের পুত্র। গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুশয্যায় থাকা ব্যক্তির নাম মো. মুবিন (২৫)। তিনি চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের চড়া পাড়ার ছাবের আহমদের পুত্র।

মারা যাওয়া দানু মিয়ার কন্যা শিফা আক্তার জানান, তাঁকে চকরিয়ার কোনাখালীতে বিয়ে দেওয়া হয়। সে সুবাদে তার বাবাও তাঁর সঙ্গে থাকতেন। কিন্তু ২০২৩ সালের পহেলা ডিসেম্বর চকরিয়ার কোনাখালী এলাকায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে খুন হন পেকুয়ার কলেজ শিক্ষার্থী আসহাবুল করিম জিহাদ। সেই জিহাদ হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় ১২ আসামির সঙ্গে তাঁর বাবাকেও আসামি করে দেওয়া হয়। ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেওয়ার পর নিয়মানুযায়ী

চকরিয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বাড়ি থেকে বের হন তাঁর বাবাসহ তিনজন। তন্মধ্যে তার বাবা ও মুবিন চকরিয়া সদরের দিকে রওনা দিলে পথিমধ্যে তাদের গতিরোধ করে জোরপূর্বক সিএনজি টেক্সিতে তুলে পাশ্ববর্তী পেকুয়া সদরের একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী। সেখানে দিনভর জিম্মি করে বেধড়ক পেটানো হয় তাদের। এর পর মুমূর্ষু অবস্থায় সড়কের ধারে ফেলে দিলে পেকুয়া থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে।

স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীর ফোন পেয়ে পেকুয়ার সড়কের ধার থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় দুইজনকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া বলেন, ‘পেকুয়ার কলেজ শিক্ষার্থী আসহাবুল ইসলাম জিহাদ হত্যা মামলার এজাহারনামীয় তিন আসামিকে মঙ্গলবার সকাল দশটার দিকে ধাওয়া দেয় একদল লোক। সেখান থেকে দুই আসামি ধলা মিয়া ও মুবিন নিরুদ্দেশ হয়ে পড়েন। ৯৯৯ মারফত খবর পেয়ে লাল ব্রিজ এলাকা থেকে হত্যা মামলার অপর আসামি মোবারক আলীকে কিছু মানুষের জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরে রিকল জমা দেওয়ায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

ওসি চকরিয়া বলেন, হতাহতের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভারতে আটকা ৭৯ নাবিক ও জেলেকে উদ্ধারে কাজ চলছে
পরবর্তী নিবন্ধআমদানি কন্টেনার অফডকে স্থানান্তর করে ডেলিভারি প্রদানের অনুরোধ