পেকুয়ায় জলমহালের একাংশে বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের

জায়গা ভরাটের মাধ্যমে শ্রেণিও পরিবর্তন ম অভিযোগ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ম ৫ বছর ধরে প্রশাসন নীরব

ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া | শনিবার , ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:২৯ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের পেকুয়ায় ২০ একরের একটি বদ্ধ জলমহালের একাংশে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরি করা হয়েছে। এতে ওই জলমহালটির এক একর জায়গা ভরাটের মাধ্যমে শ্রেণিও পরিবর্তন করে পাঁচবছর ধরে দখলে রাখার অভিযোগ ওঠেছে উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন থেকে তিনবছরের জন্য উজানটিয়াসুতাচুরা এলাকার জলমহালটি লিজ নিয়ে সেই জলমহালের একাংশে (এক একর জায়গায়) মাটি ভরাটসহ মহালের শ্রেণি পরিবর্তন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তৎপর হয় পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন। কিন্তু দখলে নিয়ে শ্রেণি পরিবর্তন করে ফেলা অংশ ছেড়ে দিতে ইজারাদার উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম শহীদুল ইসলাম চৌধুরীকে নির্দেশ দেওয়া হলেও তাতে তিনি কর্ণপাত করেননি। উল্টো গত পাঁচ বছর ধরেই সাবেক চেয়ারম্যান তাঁর মৎস্য ঘেরের কার্যক্রম চালাচ্ছেন। অপরদিকে পত্র দিয়ে দায় সেরে নীরব রয়েছে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন।

স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবীরা জানান, উজানটিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত এক নম্বর খাস খতিয়ানের প্রায় ২০ একর আয়তনের উজানটিয়াসুতাচূরা জলমহালটি (খাল) তিন বছর পর পর স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবী সমিতিকে ইজারা দিয়ে রাজস্ব আদায় করে থাকে জেলা প্রশাসন। কিন্তু পাঁচ বছর পূর্বে উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থাককালীন সময়ে এটিএম শহীদুল ইসলাম চৌধুরী কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে জলমহালটি তিন বছরের জন্য ইজারা নেন। এর পর ইজারার শর্ত লংঘন করে জলমহালের একাংশে এক একর জায়গায় মাটির বাঁধ দিয়ে মৎস্য ঘের তৈরি করেন। উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান তোফাজ্জল করিম বলেন, জলমহালটি ইজারা পাওয়ার কথা প্রকৃত মৎস্যজীবী সমিতির। কিন্তু নিজে মৎস্যজীবী না হলেও অনিয়মের মাধ্যমে সেই জলমহাল বাগিয়ে নেন সাবেক চেয়ারম্যান। এর পর জলমহালের শ্রেণী পরিবর্তন করে ব্যক্তিগত মৎস্য ঘের তৈরি করলেও প্রশাসন এখনো পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই জলমহাল তথা খালটি দখলমুক্ত করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি জেলা প্রশাসনের প্রতি।’

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ২০ একর আয়তনের এই জলমহালটি মাত্র ৯০ হাজার টাকা মূল্যে তিন বছরের জন্য ইজারা নেন সাবেক এই চেয়ারম্যান। কিন্তু কিছুদিন পর দখলের মাধ্যমে জলমহালের শ্রেণী পরিবর্তন করে একাংশে বাঁধ দিয়ে জবর দখল করে নিলে স্থানীয়রা অভিযোগ দেয় প্রশাসনের কাছে। এর ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন। সেই তদন্ত কমিটি ২০১৯ সালের ১৭ জুন ঘটনাস্থল পরির্দশন করে অভিযোগের সত্যতা পায়। এর পর পেকুয়া উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবউল করিম জলমহালে অবৈধভাবে দেওয়া বাঁধ কেটে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে লিখিত আদেশ দেন চেয়ারম্যানকে। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রায় পাঁচ বছর হতে চললেও প্রশাসনের সেই নির্দেশনা মানেননি সাবেক চেয়ারম্যান।

অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এটিএম শহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘উজানটিয়াসুতাচুরা জলমহালটি আমি ইজারা নিয়েছিলাম। সেই সময় মাছ চাষের জন্য একটি বাঁধ দিয়েছিলাম। আর সেখানে আমার কিছু ব্যক্তি মালিকানার খতিয়ানি জায়গা রয়েছে।’

স্থানীয় বাসিন্দা মোশারফ হোছাইন বলেন, ‘রহস্যজনকভাবে পেকুয়া উপজেলা প্রশাসন নীরব থাকায় নিজের সুবিধামতো উল্টো দখলের পরিধি বাড়িয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাই জলমহালটির বাঁধ অপসারণ করতে হবে।’

এই বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অফিসার চাই থোয়াই হ্লা চৌধুরী বলেন, ‘এই বিষয়টি আগে থেকে অবগত ছিলাম না। সরকারি জলমহালে কোনো অবস্থাতেই বাঁধ এবং জবরদখল করতে দেওয়া হবে না। অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধহিমাগার নেই, লোকসানে সীতাকুণ্ডের সবজি চাষিরা
পরবর্তী নিবন্ধটানা বন্ধে খাগড়াছড়িতে পর্যটকের ঢল