পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে হবে

| মঙ্গলবার , ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

লাগামহীন পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। রোববার থেকে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। গত শনিবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, রোববার থেকে পরবর্তী আদেশ না দেয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০টি করে পেঁয়াজের আইপি ইস্যু করা হবে। প্রত্যেক আইপিতে সর্বোচ্চ ৩০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেয়া হবে। অর্থাৎ প্রতিদিন সর্বোচ্চ দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে।

এতে আরো বলা হয়, গত ১ আগস্ট থেকে যে সব আমদানিকারক আমদানি অনুমতির জন্য আবেদন করেছেন তারাই কেবল আবেদন পুনরায় দাখিল (রিসাবমিট) করতে পারবেন। একজন আমদানিকারক একবারের জন্য আবেদনের সুযোগ পাবেন। প্রতিদিন সকাল ১০টায় সার্ভার খুলে দিয়ে আইডিগুলোকে আনলক করে দেয়া হবে। ৫০টি আবেদন রিসাবমিটের পর আবার স্বয়ংক্রিয়ভাবে সার্ভার বন্ধ হয়ে যাবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রোববার থেকে যারা আইপি রিসাবমিট করবে সবকিছু ঠিক থাকলে ওইদিনই তাদের আমদানির অনুমতি দেয়া হবে। অর্থাৎ তিনি ওইদিন থেকেই পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেন। তবে প্রতিদিন সর্বোচ্চ দেড় হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। বাজার যতদিন নিয়ন্ত্রণে না আসবে, ততদিন আমদানির অনুমতি দেয়া হবে।

কোনোভাবেই অস্বীকারের উপায় নেই, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। আমরা মনে করি, পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করলেও এখনো রপ্তানি শুল্ক বহাল রাখায় তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফলে প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, ব্যবসায়ীরা একেক সময় একেক অজুহাতে ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। বাজারে পেঁয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ থাকলেও তারা যা করার করে যাবেন। তাদের অভিযোগ, পেঁয়াজের যথেষ্ট উৎপাদন হওয়ার পরও ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি প্রতিবন্ধকতাকে অজুহাত বানিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায়বোধ করেন। অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ এখনো নেওয়া হয় নি। ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর এ প্রবণতা রোধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হলে পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

ক্রেতাদের অভিমত, সরকার বদলালেও বাজারের চিত্র বদলায়নি; অসাধুরা এখনও লুটে নিচ্ছে টাকা। তাঁরা বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর কয়েক দিন দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে আবারো সেই একই চিত্র। সরকার বদলালেও বদলায়নি বাজারের চিত্র। এখনও বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে ভোক্তার পকেট কাটছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে, দর বাড়ার ব্যাপারে খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে একপক্ষ দোষ চাপাচ্ছেন আরেক পক্ষের ওপর। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দর নির্ধারণের আগে সরকার কোনো পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেনি। উৎপাদন না বাড়িয়ে দর নির্ধারণ করলে তা বাস্তবায়ন হবে না। আর খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে, যে কারণে বেঁধে দেওয়া দামের মধ্যে তারা বিক্রি করতে পারছেন না।

সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘সীমিত আয়ের মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ। এরপরও যদি দফায় দফায় দাম বাড়তে থাকে, তাঁরা নিরুপায়। ভোক্তাদের স্বস্তি দিতে সরকার অপেক্ষাকৃত কম দামে নিত্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে পারে। সেই সঙ্গে নিয়মিত বাজার তদারক করতে হবে, যাতে কেউ কারসাজির সুযোগ না পান।’

বাজারে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া এবং সেটি কার্যকর না হওয়া নিয়মিত ঘটনা হয়ে গেছে। বিগত সরকারও দাম বেড়ে গেলে কিছু পণ্যের যৌক্তিক দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, কিন্তু বাজারে তা বাস্তবায়ন হতে দেখা যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। বড় বড় সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত উপদেষ্টারা যদি বাজার নিয়ন্ত্রণের মতো ছোট্ট বিষয়টির প্রতি একটু নজর দিতেন, তাহলে সীমিত আয়ের মানুষেরা একটু স্বস্তি পেতেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে