পেঁয়াজের বাজার অতিদ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করুন

| শনিবার , ৯ অক্টোবর, ২০২১ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

বাজারে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে চলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশে এবার প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। ক্রেতা সাধারণের প্রশ্ন হচ্ছে, যে কারণই দেখানো হোক না কেন, প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বেড়ে এক লাফে ৭০ টাকা হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কী কারণে পেঁয়াজের দাম এত বেড়েছে। বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কি কম? বলা হচ্ছে, বাজারে সংকট থাকায় খুচরা বাজারে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। এই কথার কোনো ভিত্তি নেই। দৈনিক আজাদীতে গত ৫ অক্টোবর ‘আবারও অস্থির পেঁয়াজের বাজার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে বেড়েই চলেছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজে দরবৃদ্ধির কারণে পেঁয়াজের বাজার চড়া বলছেন ব্যবসায়ীরা। গত তিনদিনের ব্যবধানে পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা। ভোক্তারা বলছেন, বছরের শেষের দিকে পেঁয়াজের দরবৃদ্ধি নতুন কিছু নয়। গত বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছেন। সরকার দেশি পেঁয়াজ চাষীদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুব্ধ না করলে পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নগরীর চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিনদিনের ব্যবধানের ভারতীয় পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৩ টাকায়। এছাড়া মিয়নমারের পেঁয়াজ কেজিতে ৭ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৪৬ টাকায়।
কোনোভাবেই অস্বীকারের উপায় নেই, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। আমরা মনে করি, পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, দেশে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে যাওয়ায় জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ফলে প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ভারত, তুরস্কসহ অনেক দেশে দুই থেকে তিন মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদিত হলেও আমাদের দেশে হয় শুধু শীত মৌসুমে। ফলে পেঁয়াজের বাজার আমদানিনির্ভরতা থেকে বের হতে পারেনি। তবে সামপ্রতিক বছরগুলোতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে উৎপাদনও বাড়ছে। প্রতিবছর নিয়ম করে ৩ থেকে ৪ শতাংশ উৎপাদন বাড়লেও ২০১৯-২০ সালে উৎপাদন বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। এর পরিমাণ দেড় লাখ টনের ওপরে। ২০২০-২১ সালের হিসাব পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উৎপাদন বৃদ্ধির হার আরো বাড়বে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২৫ লাখ টনের বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্যে দেখা যায়, ২০১৯-২০ সালে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে ১৯ লাখ ৫৩ হাজার টন। এটা আগের বছরের তুলনায় এক লাখ ৫১ হাজার টন বেশি। ২০১৮-১৯ সালে উৎপাদন ছিল ১৮ লাখ দুই হাজার টন। সে হিসাবে এক বছরে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছে ৮.৩২ শতাংশ। তার আগের বছর পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েছিল ৬৫ হাজার ১৫৪ টন বা ৩.৭৩ শতাংশ। ২০১৭-১৮ সালে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ১৭ লাখ ৩৭ হাজার টন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। তখন আর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ্য করে আসছি, আমদানিকৃত পেঁয়াজের আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের কৃষক পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পান না। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ পচে নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায়বোধ করেন। অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বললেই চলে। ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর এ প্রবণতা রোধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হলে পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬