পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়ার কারণে ভারতীয় পেঁয়াজের দরপতন হয়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১৫ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের বাজারে ২৫–৩০ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে। সেই তুলনায় ক্রেতা নেই। তাই পেঁয়াজের দাম নিম্নমুখী।
গতকাল চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ভালো মানের ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এছাড়া কিছুটা নিম্নমানের খাসখালী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২–২৫ টাকায়। এদিকে পাইকারিতে দরপতন হলেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। পাইকারির সাথে খুচরার পার্থক্য ১০ টাকা। চাক্তাই–খাতুনগঞ্জের কয়েকজন আড়তদার জানান, সরকার কৃষকদের বাঁচাতে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রাখে। তবে সেই সুযোগে এক শ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগী পেঁয়াজের বাজারে দাম বৃদ্ধি করে। পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা হওয়ার পর সরকার আমদানির অনুমতি দেয়। তখন দুদিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার অর্ধেকে নেমে আসে। সেই ধারাবাহিকতায় পেঁয়াজের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। আসলে পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য হওয়ায় চাইলেই বেশিদিন মজুদ করে রাখা যায় না। গ্রীষ্মকালে তো সমস্যা আরো বেশি। পেঁয়াজের বাজার নির্ভর করে আমদানি ও সরবরাহের ওপর। ভারতে চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়ায় ওরা পণ্যের বুকিং দর কমিয়ে দিয়েছে। ফলে আমাদের দেশে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে।
তারা বলেন, প্রশাসন পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম একটু বাড়লে যেভাবে মনিটরিং করে, খুচরা বাজারে কিন্তু সেই মনিটরিংটা হয় না। ভোক্তারা পেঁয়াজ কিনে খুচরা বাজার থেকে। তাই খুচরায় দাম কমলে ভোক্তারা সরাসরি এর সুফল পাবেন।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস আজাদীকে বলেন, খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। সেই হিসেবে ক্রেতা নেই। আমরা আগেই বলেছিলাম, পেঁয়াজের বাজারে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যাবে। বাস্তবে তাই হয়েছে। উল্টো এখন আমদানিকারকদের লোকসান গুনার অবস্থা। দাম যদি এর থেকে কমে যায় তবে লোকসান গুণতে হবে। পেঁয়াজের বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত। বিভিন্ন ব্যবসায়ী বিভিন্নভাবে পেঁয়াজ আমদানি করছেন। আমদানি বাড়ার কারণে এখন দাম কমছে।
নগরীর কাজীর দেউড়ি এলাকার বিক্রেতা মো. মিজানুর রহমান জানান, বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। বিভিন্ন জায়গায় খারাপ মানের পেঁয়াজ আরো কম দামেও বিক্রি হতে পারে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, পাইকারিতে এখন পেঁয়াজের দরপতন হলেও ব্যবসায়ীরা কিন্তু মুনাফা যা করার করে ফেলেছেন। ২০ টাকা আমদানি করা পেঁয়াজ দ্বিগুণ, তিন গুণ দামেও বিক্রি করেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, পাইকারিতে দাম কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়ছে না। তাই প্রশাসনকে পাইকারির সাথে সমন্বয় করে খুচরা বাজারে অভিযান চালাতে হবে।
উল্লেখ্য, সরকার দেশের কৃষক বাঁচাতে গত ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি (আইপি) বন্ধ করে দেয়। পরে দেশীয় পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ায় গত ৫ জুন থেকে আইপি দেওয়া শুরু করে কৃষি মন্ত্রণালয়।