আবারও পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। জানা যায়, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় দেশে পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যটির দাম বাড়ছে। এই অবস্থায় ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ হিসেবে মিয়ানমার, তুরস্ক, মিসর, চীন ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানির খোঁজ নিচ্ছেন বলে পত্রিকান্তরে বলা হয়েছে। হিলি স্থলবন্দরের এক আমদানিকারকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বৃহস্পতিবার হিলি বন্দরেই তিনি পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন ৩৯ টাকা, শনিবার সেই পেঁয়াজ ৪৭ টাকায় বিক্রি হয়। ৪০ শতাংশ শুল্কারোপের খবরে কেজিতে আরো দাম বাড়ে। ভারত যেহেতু ডিসেম্বর পর্যন্ত শুল্কারোপ করেছে, তাই মনে হচ্ছে আগামীতে দাম আরো বাড়বে। এ জন্য বিকল্প দেশ হিসেবে তুরস্ক, পাকিস্তান ও মিসরে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।
২২ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারত রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় আবারও অস্থির হতে শুরু করেছে পেঁয়াজের বাজার। গত সোমবার পাইকারীতে আগের দিনের তুলনায় দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। হঠাৎ করে আবার পেঁয়াজের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ায় ক্রেতাদের কপালে ভাঁজ পড়ছে। নগরীর খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দুইদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ২৩ টাকা পর্যন্ত। উল্লেখ্য, গত শনিবার ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার আগেই আমাদের দেশে পাইকারী ও খুচরায় পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। শনিবার যে পেঁয়াজের পাইকারি বাজার ছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকা, গত সোমবার সেই পেঁয়াজ প্রকারভেদে পাইকারদের নিতে হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজিতে। একদিনের ব্যবধানে বন্দর বাজারে আমদানিকারকরা পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ১২ থেকে ১৫ টাকা বেশি দরে। হঠাৎ দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েন পেঁয়াজ কিনতে আসা পাইকাররা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম। ক্রেতা সাধারণের প্রশ্ন হচ্ছে, যে কারণই দেখানো হোক না কেন, প্রতি কেজিতে পেঁয়াজের দাম ২০ টাকা বেড়ে এক লাফে ৭০ টাকা হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। কী কারণে পেঁয়াজের দাম এত বেড়েছে। বলা হচ্ছে, বাজারে সংকট থাকায় খুচরা বাজারে বেড়ে গেছে পেঁয়াজের দাম। এই কথার কোনো ভিত্তি নেই।
কোনোভাবেই অস্বীকারের উপায় নেই, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা। আমরা মনে করি, পেঁয়াজের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। ধারণা করা হচ্ছে, ভারত রপ্তানি শুল্ক বৃদ্ধি করায় এবং দেশে করোনা পরবর্তী জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসায় তার প্রভাব পড়েছে বাজারে। ফলে প্রায় সব জিনিসের দাম বেড়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, ভারত, তুরস্কসহ অনেক দেশে দুই থেকে তিন মৌসুমে পেঁয়াজ উৎপাদিত হলেও আমাদের দেশে হয় শুধু শীত মৌসুমে। ফলে পেঁয়াজের বাজার আমদানিনির্ভরতা থেকে বের হতে পারেনি। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। এতে উৎপাদনও বাড়ছে। প্রতিবছর নিয়ম করে ৩ থেকে ৪ শতাংশ উৎপাদন বাড়লেও ২০১৯–২০ সালে উৎপাদন বেড়েছে ৮ শতাংশের বেশি। এর পরিমাণ দেড় লাখ টনের ওপরে। ২০২০–২১ সালের হিসাব পাওয়া না গেলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উৎপাদন বৃদ্ধির হার আরো বাড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা গেলে প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ দেশেই উৎপাদন করা সম্ভব। তখন আর বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে না। আমরা দীর্ঘদিন থেকেই লক্ষ্য করে আসছি, আমদানিকৃত পেঁয়াজের আগ্রাসনের কারণে বাংলাদেশের কৃষক পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পান না। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের প্রায় শতকরা ৩০ ভাগ পচে নষ্ট হয়ে যায়। পেঁয়াজসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনায় সাধারণ মানুষের উদ্বিগ্ন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্রয়ক্ষমতা না বাড়ায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে নিম্নআয়ের শ্রমজীবীরা অসহায়বোধ করেন। অথচ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না বললেই চলে। ব্যবসায়ীদের দাম বাড়ানোর এ প্রবণতা রোধে সরকারকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়া হলে পেঁয়াজের বাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে।