মা। পৃথিবীর হাজার লক্ষ শব্দের মধ্যে সবচেয়ে ছোট্ট একটি শব্দ। অথচ আমার মনে হয় এমন ক্ষুদ্রতম শব্দের ওজন হলো অন্যান্য সকল শব্দের মধ্যে কোটি গুণ ভারি একটি শব্দ। পৃথিবীর এমন কোন সন্তান নেই যিনি এক বাক্যে মায়ের প্রশংসা না করে অর্থাৎ মায়ের ভালোবাসা পাননি মর্মে প্রমাণ করতে পারবেন। এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায় যে, মায়ের ভালোবাসা ব্যতীত এ পৃথিবীর আলো দেখা কোনো সন্তানের পক্ষে আদৌ সম্ভব নয়। সন্তান জন্মের প্রায় ১০ মাস পূ্র্ব হতে শুরু হওয়া মায়ের কষ্ট তাঁর জীবদ্দশায় যেন শেষই হয় না। যুবক বা বৃদ্ধ বয়সের সন্তানের সামান্য অসুখ বা বিপদের কথা শোনলেও নিজের শারীরিক বা অন্যান্য সমস্যাদির কথা চিন্তা না করে মায়ের আরামের ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম হয়।
আমার বাবা যখন ইন্তেকাল করেছেন তখন আমার মা পূর্ণ যুবতী। আমার বাবার স্থলে যদি আমার মা মারা যেতেন তখন অন্যান্য অধিকাংশ বাবার ন্যায় আমার বাবা তাঁর নতুন জীবন সঙ্গিনী খুঁজে নিতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করতেন মর্মে আমার মনে হয় না। আমার মায়েরও সে রকম সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি সে পথে না হেঁটে অগণিত সংগ্রামের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ ঘাত–প্রতিঘাত সহ্য করে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের বুকে আগলে রেখে জীবন সায়াহ্নের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছেন।
এ কথাও অস্বীকার করার সুযোগ নেই যে, কিছু মা বিভিন্ন কারণে সন্তান রেখে বাধ্য হয়ে অন্যত্র অবস্থান করলেও প্রতিটি মুহূর্তে সন্তানের জন্য তাঁর মন কাঁদে, অবিরত দোয়া চলতে থাকে। এমন মমতাময়ী মা–কে কিছু কুলাঙ্গার সন্তান তার স্ত্রীর কুমন্ত্র বা ঘরের শান্তির জন্য বৃদ্ধাশ্রমে বা অন্যত্র রেখে আসে। প্রতিটি ধর্ম গ্রন্থেই এমন পাপিষ্ঠ সন্তানের জন্য পরকালে কঠোর শাস্তির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে মায়ের সঙ্গে বনিবনা না হলে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘটনাও মাঝে মধ্যে শোনা যায়, অনেকেই এমন স্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন কারণে বাধ্য হয়ে সংসার করলেও এ কথা নির্ধিদ্বায় বলা যায় যে, স্বামীর সঙ্গে সে–ই স্ত্রীও পরকালে অবশ্যই কঠোর শাস্তির সম্মুখীন হবে। মায়ের জন্য কেমন কষ্ট করেছে বা কষ্ট করছে তা কিছু কিছু সন্তানকে গর্বের সঙ্গে বর্ণনা করতে দেখা যায়, অথচ এমন সন্তানের বিন্দুমাত্র বোঝার ক্ষমতা নেই যে, মায়ের কষ্টের তুলনায় সন্তানের সারা জীবনের কষ্ট কোটি কোটি ভাগের একভাগও নয়। পৃথিবীর সকল মায়ের জন্য রইল ভক্তিপূ্র্ণ সশ্রদ্ধ সালাম এবং শুভ কামনা।