পৃথিবীর লুকানো স্তর আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের

| মঙ্গলবার , ২০ আগস্ট, ২০২৪ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

সমপ্রতি পৃথিবীর ‘লুকানো স্তর’ আবিষ্কারের দাবি করেছেন বিজ্ঞানীরা। ‘পিকেপি’ নামে পরিচিত এক অদ্ভুত ভূকম্পীয় সংকেত কয়েক দশক ধরে বিভ্রান্ত করে চলেছে বিজ্ঞানীদের, যা পৃথিবীর কেন্দ্রের মধ্যে দিয়ে ভ্রমণ করে এমন ভূমিকম্পের মূল তরঙ্গের আগেই ভূপৃষ্ঠে এসে পৌঁছায়। খবর বিডিনিউজের।

দীর্ঘদিন ধরেই এইসব সংকেত রহস্যে মোড়া ছিল বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। সমপ্রতি রহস্যটি উন্মোচিত হয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ’র ভূতাত্ত্বিকদের করা নতুন এক গবেষণায়। পিকেপি বা এসব সংকেতের পূর্বসূরীরা উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের নিচের গভীর অঞ্চল থেকে এসেছে বলে ধারণা ছিল বিজ্ঞানীদের।

গবেষকদের দাবি, এইসব সংকেত ‘আল্ট্রালো ভেলসিটি জোনস (ইউএলভিজেড)’ বা অতিনিম্ন বেগের অঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। পৃথিবীর ম্যান্টলের পাতলা স্তর এই ‘আল্ট্রালো ভেলসিটি জোনস (ইউএলভিজেড)’, যেখানে ভূমিকম্পের বিভিন্ন তরঙ্গ নাটকীয়ভাবে ধীর হয়ে যায়।

এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নার এজিইউ অ্যাডভান্সেসএ। গবেষণায় ইঙ্গিত মিলেছে, ইয়েলোস্টোন, হাওয়াইয়ান দ্বীপপুঞ্জ ও আইসল্যান্ডের মতো বড় আগ্নেয়গিরির হটস্পট গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে এসব ইউএলভিজেড।

পৃথিবীতে এখনপযন্ত আবিষ্কার হওয়া চরম বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এগুলো অন্যতম। আমরা আসলে জানি না এগুলো কী, বলেছেন এ গবেষণার প্রধান লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ ইউটাহ’এর ভূতত্ত্ব ও ভূপদার্থবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক মাইকেল থর্ন।

থর্ন ও তার গবেষণা দল আবিষ্কার করেন, এসব ইউএলভিজেড প্রায়শই আগ্নেয়গিরির হটস্পটের নিচে জড়ো হতে থাকে। ফলে গবেষকদের দাবি, ম্যান্টলের বিভিন্ন প্লামের মূল হতে পারে এইসব অঞ্চল, যা এই বড় আকারের ও নাছোড়বান্দা প্রকৃতির আগ্নেয়গিরি তৈরি করে। থর্নের গবেষণা দলটি ৫৮টি ভূমিকম্পের তথ্য খতিয়ে দেখতে উন্নত ভূকম্পীয় প্রযুক্তির কৌশল ব্যবহার করেছে, যা ঘটেছিল অস্ট্রেলিয়ার দ্বীপ ‘নিউ গিনি’র কাছে ও রেকর্ড করা হয়েছিল উত্তর আমেরিকায়।

ভূমিকম্পের বিভিন্ন তরঙ্গরূপের মডেল করার জন্য একটি নতুন পদ্ধতি বিকাশ করেন গবেষকরা। এতে পৃথিবীর তরলের বাইরের কোর ও ম্যান্টলের মধ্যে সীমানা বরাবর নির্দিষ্ট বিভিন্ন অবস্থানে পিকেপির পূর্বসূরীদের উৎসটি শনাক্ত করতে সক্ষম হন, যা পৃথিবী পৃষ্ঠের ২৯০০ কিলোমিটার নিচে অবস্থিত ‘কোরম্যান্টল’ সীমানা হিসাবে পরিচিত।

গবেষণার এসব ফলাফল থেকে প্রমাণ মিলেছে, পিকেপির পূর্বসূরীরা সম্ভবত এই কোরম্যান্টল সীমানায় ইউএলভিজেডএর মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গবেষক থর্নের অনুমান, এগুলো তৈরি হয় অতিনিম্ন বেগের বিভিন্ন অঞ্চলে, যার অধীনে রয়েছে বিভিন্ন টেকটোনিক প্লেট। এটি পৃথিবীর ভূত্বকের একটি টুকরা, যা ম্যান্টলের মধ্যে ডুবে আছে। আর এটিই মহাসাগরীয় অঞ্চলের কোরম্যান্টল সীমানায় আঘাত করেছে। বিশেষ করে উত্তর আমেরিকার নিচে এর অবস্থান।

বর্তমানে আমরা যা পেয়েছি তা হলো এই অতি নিম্ন বেগের বিভিন্ন অঞ্চল কেবল নানা আগ্নেয়গিরির হটস্পটের নিচেই আছে এমন নয়। এগুলো উত্তর আমেরিকার নিচে কোরম্যান্টল সীমানা জুড়েও ছড়িয়ে পড়েছে, বলেন থর্ন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের নিকটস্থ সিএমএইচ-এ যোগাযোগ করার অনুরোধ
পরবর্তী নিবন্ধসৈয়দা উম্মে সালমা