পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কারিগর একজন নারী

শেখ বিবি কাউছার | মঙ্গলবার , ৭ মার্চ, ২০২৩ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটির উদ্ভব হয়েছে ল্যাটিন Universitas Magistrorum et Scholarium থেকে। যার অর্থ শিক্ষক ও পণ্ডিতদের সমপ্রদায়। বিদ্যালয় শব্দটির সাথে বিশ্ব শব্দটি যোগ করার অর্থ হলো, এই বিদ্যাপীঠ কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশ বা জাতির জন্য নয়। এটি সারা বিশ্বের জন্য। বর্তমানে পৃথিবীতে লাখো বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিন্ত কোনটি পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় তা নিয়ে কয়েকটি অভিমত পাওয়া যায়। চীনাদের দাবি, পৃথিবীর প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় হলো চীনের সাংহাই হায়ার স্কুল। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ২২৫৭ খ্রীষ্টপূর্ব। পাকিস্তানের দাবি, পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানের ‘তক্ষশীলা বিশ্ববিদ্যালয়’।

এদিকে ভারতীয়দের দাবি, বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হলো ভারতের বিহারের ‘নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়’। এসব মতামত পেছনে রেখে মুসলমানরা দাবি করে পৃথিবীতে তারাই সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। আন্তজার্তিকভাবে গ্রহণযোগ্য দলিলদস্তাবেজ মুসলমানদের পক্ষে। গিনেসবুকের রেকর্ড অনুসারে মরক্কোর ফেজ নগরীর ‘কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়’ পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়। UNESCO এর ঘোষণা মতেও এ বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় (A History of the University in Europe. Vol.1.)। মরক্কোর ফেজ নগরীর এই প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ৮৫৯ খ্রি:। এই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর সময় ছিল ইসলামের সোনালি যুগ। তবে আপনি জেনে অবাক হবেন, ফেজ নগরীর এক ধনাঢ্য মহিয়সী নারী ফাতিমা আল ফিহরি চালু করেন বিশ্বের এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়টি।

ফাতিমার জন্ম এখনকার তিউনিশিয়ার কাইরুয়ান শহরে ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে। পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব তাঁর। পুরো নাম ফাতিমা বিনতে মোহাম্মদ আলফিহরি আলকুরাইশ। নাম থেকেই প্রতীয়মান তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত। নবম শতকের শুরুতে কাইরুয়ান থেকে মরক্কোর ফেজ শহরে যখন বিপুলসংখ্যক মানুষের অভিবাসন ঘটে সে সময় ফাতিমার পরিবারও চলে আসে। প্রথম দিকে এটি ছিল মসজিদ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। এটি নির্মাণ করতে সময় লাগে ২৭৮ বছর। ইতালির বোলোনা(Bologna)য় যখন প্রথম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়। তারও আগে কারাওইন হয়ে ওঠে এক বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। আল কারাউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে রয়েছেন ইবনে খালদুন (১৩৩২১৩৯৫), ইবনে আল খাতিব, ইবনে হারাজিম, মুহাম্মদ আল ইদ্রিস (মৃত্যু ১১৬৬) প্রমুখ জগৎ খ্যাত পণ্ডিত। গণিত ও মহাকাশবিদ্যা পড়াশোনার শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে ফাতিমার বিশ্ববিদ্যালয় সমাদৃত হয়। এমনকি পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টারও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এখনো পৃথিবীর বহু দুর্লভ পাণ্ডুলিপি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠাগার ও আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের অনেক বিদ্বান, দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক মরক্কোয় স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন।

উল্লেখ করা দরকার ইসলামী শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সূচনা ৯৭০ সালে। তারও ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে একজন মুসলমান নারী ফাতিমার হাতে পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের গোড়াপত্তন হয়। কালক্রমে এটি ২২ হাজার শিক্ষার্থী ধারণক্ষম হয়ে ওঠে। তাহলে বলাই যায় সভ্য দুনিয়াকে লেখাপড়া শেখাতে মুসলমান নারীদের অবদানও কম নয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআঠোরো মিনিট
পরবর্তী নিবন্ধআন্তর্জাতিক নারী দিবস ও প্রাসঙ্গিক কথা