পৃথিবীটা আজ বড়ই অশান্ত

নাজনীন আমান | রবিবার , ২৬ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

বিধাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সকালের স্নিগ্ধ আলোয় মুগ্ধ হয়ে খবরের কাগজে যখনই চোখ বুলাই, মুগ্ধতাকে গ্রাস করে বসে বিষণ্নতা, হতাশা আর অজস্র কষ্ট। ভালো খবর তো চোখেই পড়ে না। চারিদিকটা কেমন যেন নেতিবাচক আর অশান্তিতে পূর্ণ। কোথাও, কেউ শান্তিতে কি আছে? অস্থিরতা, দুর্দশা, দুর্যোগ, আর যুদ্ধের সাথে লড়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। বিশ্বটা আজ কেমন যেন নিস্প্রভ, নিস্প্রাণ, আলোকহীন। কমলালেবুর মত মিষ্টি, গোল পৃথিবীটা বন্যা, সুনামি, ভূমিকম্প, খরা, দাবানলে একদিকে যেমন বির্পযস্ত, অন্যদিকে যুদ্ধে যুদ্ধে আজ সে ক্ষত বিক্ষত, রক্তাক্ত, জর্জরিত। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈশ্বিক কোনও দিকেই তো স্বস্তি নেই। মনুষ্যত্ব, মানবিকতা, জাগ্রত বিবেক, সৎ সাহস সব কিছু যেন কোথায় হারিয়ে গেছে। ঋতু বৈচিত্র্যে দেখা দিয়েছে ছন্দপতন। নিজস্ব গতিতে এখন আর বদলায় না ঋতু। নির্দিষ্ট সময়ে কদম ফোটে না বৃষ্টিকে আলিঙ্গন করতে, শিউলি ঝরে পড়ে না কাউকে ভালোবাসার নেশা জাগাতে, আমলকীর ডালে ডালে শীতের নাচন লাগে না। প্রকৃতি আজ বড় বেসামাল। মানব জাতির বড় আশ্রয় পৃথিবী, তার অস্তিত্বই আজ যে বড় নড়বড়ে। এত হাহাকার, এত অরাজকতা, এত বৈষম্য ও যে আর বহন করতে পারছে না। দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি ফুরিয়ে এল পৃথিবীর আয়ু। আর পৃথিবীর আয়ু ফুরিয়ে যাওয়া মানেই কিন্তু মানব জাতিরও বিদায় ঘণ্টা বেজে যাওয়া। উপরদিক থেকে দেখলে মনে হতে পারে পৃথিবী টা কত শক্ত কিন্তু আসলে কি তাই? ভিতরটা যে ওর বড্ড নরম। এত ধ্বংস, হাহাকার, শ্রেণি বৈষম্য, কান্না, মৃত্যু, গোলাবারুদের গন্ধ, পৃথিবী আর যে বহন পারছে না। যুগের পর যুগ এত কষ্ট, এত অত্যাচার, ক্ষমতার লালসায় অত্যাচারিত, নিপীড়ন আজ সহ্য করতে, আগলে রাখতে পৃথিবীর বড় কষ্ট হচ্ছে। এই ক্ষয়ে যাওয়া পৃথিবীর এখন প্রয়োজন একটু যত্নের, একটু সহানুভূতির, একটু শান্তির। মানুষ তার মনুষ্যত্বকে বিসর্জন দিয়ে এখন হয়ে উঠছে একেকটা দানব। তাদের ভিতরের আমিত্ব বা বিবেক আর কাজ করে না। যে যেভাবে পারছে অন্যায় করছে, অপরাধ করছে। কোনও অন্যায়ের ভয়ে তারা আজ ভীত নয়। অন্যায়টা আজ ন্যায়ে পরিণত হয়েছে। ভিতরের অন্তরাত্না এখন আর নাড়া দেয় না, জাগ্রত করে না। লোভ, ক্ষমতার বড়াই, হিংসার বলয় দ্বারা তারা আবৃত, পরিচালিত আজ। এর খোলস ছেড়ে মানুষ কোনভাবেই বের হয়ে আসছে না সত্য ও ন্যায়ের পথে। চারিদিকে এখন অমানবিকতার জৌলুস, ধ্বংসের লীলা খেলা। এর থেকে পরিত্রাণ মিলবে কি? উওর নেই জানা। তবুও করি প্রার্থনা, এই অশান্ত অবস্থা থেকে পৃথিবীকে, পৃথিবীর মানুষকে সৃষ্টি কর্তা রক্ষা করুন। সকলকে শান্তি দান করুন। মানবের মাঝে মানবিকতা, মনুষ্যত্ব উন্মোচিত হোক। তাই রবির সুরে বলি : ‘আকাশ ভরা সূর্য তারা,/ বিশ্ব ভরা প্রাণ/ তাহারি মাঝখানে আমি/ পেয়েছি মোর স্থান/ বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান’

পূর্ববর্তী নিবন্ধকল্পলোক আবাসিকের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংস্কার করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধনতুন শিক্ষাক্রম হবে : প্রতিযোগিতা নয় শিক্ষা হবে সহযোগিতায়