করোনাকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কোভিড রোগীদের জন্য পৃথক কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার সেবার জগতে এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। কোভিড রোগীদের অনেকেরই আশ্রয় হয়ে উঠে এই ইউনিট। কোথাও যাওয়ার সুযোগ না থাকা বহু কিডনি রোগী এখান থেকে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। গত জুন মাস থেকে বিনে খরচে কিডনি ডায়ালাইসিসের কার্যক্রম চলে আসছে। হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ডা. মোহাম্মদ নুরুল হুদা ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে কোভিড রোগীদের ডায়ালাইসিসের জন্য এই ইউনিটের কার্যক্রম শুরু করেন। চমেক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া কিংবা বাইরের কোভিড এবং সাসপেক্টেড কোভিড রোগীদের কিডনি ডায়ালাইসিসের এই কার্যক্রম বহু মানুষের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ডা. নুরুল হুদা জানান, দেশে কোভিড মহামারিতে কিডনি ডায়ালাইসিস নিয়ে তীব্র সংকট তৈরি হয়। বহু কোভিড রোগী কোথাও ডায়ালাইসিসের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। আবার কোভিড রোগীদের সাধারণ ডায়ালাইসিস সেন্টারে নিয়ে চিকিৎসা দিলে তা অন্য কিডনি রোগীর জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই চিন্তা থেকে তিনি কোভিড এবং সন্দেহজনক কোভিড রোগীদের জন্য একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার গড়ে তোলার ব্যাপারে উদ্যোগী হন। বিষয়টি নিয়ে তিনি চমেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে আলোচনা করেন। তিনি সর্বাত্মক সহায়তা করেন।
চমেক হাসপাতাল কিডনি বিভাগের প্রধান এই চিকিৎসক জানান, হাসপাতালের পরিচালকের আশ্বাসের পর তিনি বিভাগের চিকিৎসক, নার্স এবং কর্মকর্তা কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্টদের সহায়তায় আলাদা একটি ইউনিট গড়ে তোলার কার্যক্রম শুরু করেন। ব্যক্তি উদ্যোগে অর্থ সংস্থান করে মেশিন ক্রয় ও ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রকল্প স্থাপনের মত জটিল কাজ সম্পন্ন করা হয়। নানা জনের সহায়তায় গত জুন মাসের শুরু থেকে এই ইউনিটের কার্যক্রম পুরো দমে শুরু হয়।
তিনি জানান, কোভিডের কারণে বহু কিডনি রোগী চরম সংকটে পড়ে গিয়েছিলেন। তাদের ডায়ালাইসিস করানো যাচ্ছিল না। আর একজন কিডনি রোগীর জন্য ডায়ালাইসিস কত জরুরি তা বলে বুঝানো যাবে না। আমাদের এই উদ্যোগ বহু মানুষেরই কাজে লেগেছে, রক্ষা পেয়েছে বহু জীবন- এটিই আমাদের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
উল্লেখ্য, চমেক হাসপাতালের কিডনি বিভাগে পিপিপি এবং ইমারজেন্সি রোগীদের জন্য পৃথক দুটি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু রয়েছে। চট্টগ্রামের হাজার হাজার রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেন। করোনা মহামারিতে হাসপাতালে রোগীদের চাপ অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে কিডনি রোগীদের মধ্যে যারা করোনা আক্রান্ত কিংবা করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন তাদের কিডনি ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা অন্য কোনো হাসপাতালে না থাকায় সংকট প্রকট হয়ে উঠে। এই সংকট কাটাতে আলাদা কিডনি ডায়ালাইসিস ইউনিট অনেক বড় ভূমিকা রাখে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।