কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই গতকাল বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কর্মরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। আগের দিন (মঙ্গলবার) চমেক ক্যাম্পাসে সংঘটিত দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জের ধরে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এ কর্মবিরতি শুরু করে। সবমিলিয়ে ৩০৭ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক বর্তমানে হাসপাতালে কর্মরত আছেন।
এ ঘটনায় গতকাল দুপুরে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে চমেক হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনসহ আরো কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের এসব সিদ্ধান্তের পরও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেননি ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। যদিও ইন্টার্নদের কর্মবিরতিতে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবায় তেমন প্রভাব পড়ছে না বলে দাবি করেছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, কোভিড জোনে (করোনা ইউনিটে) ইন্টার্নদের দায়িত্ব নেই। সাধারণ ওয়ার্ডগুলোতেও রোগী সংখ্যা এখন প্রায় অর্ধেক। আগে দৈনিক প্রায় ৩ হাজার রোগী ভর্তি থাকতো। আজ (গতকাল বুধবার) ১৪০০ মতো রোগী আছে। সিনিয়র ডাক্তার ছাড়াও প্রশিক্ষণার্থী অনেক চিকিৎসক আমাদের এখানে দায়িত্ব পালন করেন। সবমিলিয়ে ইন্টার্নদের কর্মবিরতিতেও চিকিৎসা সেবায় তেমন প্রভাব পড়ছে না।
বৈঠকে ইন্টার্নদের দাবি শুনেছেন জানিয়ে হাসপাতাল পরিচালক বলেন, আমরা জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছি। এজন্য তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করেছি। আর কর্মবিরতি প্রত্যাহারে ইন্টার্নদের অনুরোধ করেছি। কিন্তু এ নিয়ে তারা আমাদের কিছু জানায়নি।
প্রসঙ্গত, কথা কাটাকাটির জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে চমেক ক্যাম্পাসে ও ছাত্রাবাসে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে দুজন ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন। সংঘর্ষে জড়িত দুই গ্রুপের একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী এবং অপর পক্ষ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই দুই নেতার অনুসারীদের মাঝে সামপ্রতিক সময়ে আরো বেশ কয়বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরও কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) আহ্বায়ক মো. ওসমান গণি আজাদীকে বলেন, এর আগেও আমার উপর চকবাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তখনও তদন্ত কমিটি করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মঙ্গলবার রাতে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজনের নের্তৃত্বে শতাধিক বহিরাগত নিয়ে শিক্ষা উপমন্ত্রীর গ্রুপের ছেলেরা আমাদের উপর হামলা করেছে। ইন্টার্ন হোস্টেলে ভাঙচুর চালিয়েছে। এসময় আহতরা ইমার্জেন্সিতে গিয়েও চিকিৎসা নিতে পারেনি।
আগের ঘটনাগুলোয় দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়াতে এ ধরনের হামলার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। কিন্তু কারা হামলা করেছে তা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করতে সময় লাগে না। বহিরাগতসহ দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান ওসমান গণি।
পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই কর্মবিরতি কর্মসূচি পালনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসমান গলি বলেন, রাতেই আমরা ঘটনার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। ঘটনার পর রাত তিনটার দিকে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুসারে সকাল থেকে আমরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেছি। যা কর্তৃপক্ষ জানে।
যদিও ইন্টার্নদের কর্মবিরতি পালনের বিষয়টি গণমাধ্যমের বরাতে জানতে পেরেছেন বলে জানান চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে সব পক্ষ নিয়ে আমরা বৈঠক করেছি। তারা দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। আমরা তাদের আশ্বাস দিয়েছি। ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু করেছি। এটা তো একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হতে হবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে হাসপাতাল পরিচালক ছাড়াও চমেক অধ্যক্ষ, পুলিশ কর্মকর্তা ও হাসপাতালের চারটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানরাও উপস্থিত ছিলেন। ঘটনা তদন্তে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আফতাবুল ইসলামের নের্তৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন দিতে কমিটিকে ৭ কর্মদিবস সময় দেয়া হয়েছে। এছাড়াও হাসপাতাল ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার এবং ইন্টার্নদের দৃশ্যমান আইডি (পরিচয়পত্র) প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বৈঠকে।
ইন্টার্ন চিকিৎসকদের উপর হামলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজন গতকাল আজাদীকে বলেন, আমি কোনো হামলায় জড়িত ছিলাম না। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর বহিরাগত হিসেবে চমেক ক্যাম্পাসে যাওয়া প্রসঙ্গে সুজন বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ দীর্ঘদিন ধরে চবির অধীনে একটি প্রতিষ্ঠান। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরুর আগ পর্যন্ত এটি চবির একটি অনুষদ হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। বর্তমানে অধ্যয়নরত ৬০ তম ব্যাচ পর্যন্ত চবির অধীনেই। আর আমি বর্তমানে চবির একজন এমফিল গবেষক। সে হিসেবে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি অনুষদের ক্যাম্পাসে গেলে আমি বহিরাগত কিভাবে হই? আমাদের গ্রুপের কয়েকজন মারধরের শিকার হয়ে আহত শুনে আমরা সেখানে গিয়েছি। সিনিয়র হিসেবে দায়িত্ব মনে করেই আমার সেখানে যাওয়া। যাতে সংঘর্ষ না হয়, আমি সে ভূমিকাই পালন করেছি। কিন্তু তারা মিথ্যে অভিযোগ করছে। এদিকে ঘটনার পর থেকে চমেক ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।