পুলিশ হেফাজতে বাবুল আক্তার, জিজ্ঞাসাবাদ

গ্রেপ্তার দেখানো হতে পারে আজ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১২ মে, ২০২১ at ৫:৫৩ পূর্বাহ্ণ

মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এর আগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে চট্টগ্রামে ডেকে পাঠানো হয়।
পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার আজাদীকে বলেন, মামলার বাদী হিসেবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি আগেও এসেছিলেন। বাদী হিসেবে তার কাছ থেকে কিছু জানার আছে। আবার মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে তিনিও আসতে পারেন। সে হিসেবে আজও (মঙ্গলবার) তিনি পিবিআইতে গেছেন। এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।
এদিকে মিতু হত্যা মামলায় গতকাল বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, মামলার বাদীকে সরাসরি গ্রেপ্তার করার সুযোগ নেই। বাদীকে গ্রেপ্তার দেখাতে হলে তিনি যে মামলার বাদী সে মামলার ফাইনাল রিপোর্ট আদালতে জমা দিতে হবে। আদালতে সেটির অনুমোদন দিতে হবে। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে আরেকটি মামলা করা হবে, যেখানে দেখানো হবে বাদী নিজের করা মামলায় নিজেই সম্পৃক্ত। আদালতে হাজির করে দ্বিতীয় মামলায় তাকে গ্রেপ্তারের আবেদন করা হবে। সেই আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বাদীকে গ্রেপ্তার করা যাবে। বাবুল আক্তারের ক্ষেত্রেও তা-ই হতে চলেছে। গতকাল জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। আজ আদালতের মাধ্যমে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
পিবিআইয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, গতকাল সকালে বাবুল আক্তার পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ে আসেন। সেখানে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক (মেট্রো) সন্তোষ কুমার চাকমা এবং অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাগণ কঠোর গোপনীয়তায় মিতু হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। গত সোমবার তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসেন।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয় মিতুকে। এই ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডের তিন সপ্তাহ পর মো. ওয়াসিম ও মো. আনোয়ার নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই দিনই তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। স্বীকার করেন মুছার নেতৃত্বে হত্যাকাণ্ডে তারা সাত-আটজন অংশ নেন। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, মাহমুদা হত্যায় অংশ নেন ওয়াসিম, আনোয়ার, রাশেদ, নবী, শাহজাহান মিয়া, মুছা ও মো. কালু।
মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবি করে আসছিলেন, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনায় ও নির্দেশে তার মেয়ে মিতুকে খুন করা হয়েছে। ওই বছরের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর ফলে সন্দেহের তীর যায় বাবুলের দিকে। ২৬ জুন মো. আনোয়ার ও মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনের গ্রেপ্তারের খবর প্রকাশ করে পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। জানান, মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি তাদের দিয়েছিল ভোলা। এরপর এহেতেশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মো. মনিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়, যেটি মিতু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে পুলিশের ভাষ্য। এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে ভোলা ও মনিরকে আসামি করে একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করা হয়। এরপর ১ জুলাই মোটরসাইকেল সরবরাহ করার অভিযোগে মুছার ভাই সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু ও শাহজাহান নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভোলা, সাইদুল ও রবিন এরই মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাটি তদন্ত করে আসছিল নগর গোয়েন্দা পুলিশ। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পিবিআইকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআদালতে ২ সাক্ষীর জবানবন্দি
পরবর্তী নিবন্ধদক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্ধ-শতাধিক গ্রামে আগামীকাল ঈদ