পুলিশ সেজে প্রতারণার ছক আঁকে সাগর

ঋত্বিক নয়ন | রবিবার , ৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ at ৬:২৬ পূর্বাহ্ণ

মো. সাগর ওরফে রিমন (২৩)। ফোনে নিজেকে পুলিশ সুপার (এসপি) পরিচয় দিয়ে গত ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরীর কদমতলী এলাকায় কর্তব্যরত এক পুলিশ সার্জেন্টকে ফোন দেয়। সার্জেন্টকে একটি বিকাশের দোকানে যেতে বলে সাগর। নিজের পরিচয় উল্লেখ করে দোকানি মিনহাজউদ্দিনের সাথে কথা বলার পর সার্জেন্টকে পুনরায় কর্মস্থলে চলে যেতে নির্দেশ দেয় সে। সার্জেন্ট চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দোকানিকে ফোন দেয় সাগর। এরপর সরকারি কাজে টাকা লাগছে বলে ৫২ হাজার টাকা একটি নম্বরে পাঠাতে বলে। এসময় তাকে বলা হয় আগে যে সার্জেন্ট দোকানে গিয়েছিল তিনিই টাকা পরিশোধ করে দেবেন। একবার পুলিশের পোশাক পরা লোক আসায় বিশ্বাস করে সাগরের কথামতো দোকানি টাকা পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ওই সার্জেন্ট আর টাকা নিয়ে আসেননি। অন্যদিকে ফোন দেওয়া সাগরের কোনো পরিচয় কিংবা তার সঙ্গে পুনরায় যোগাযোগের সুযোগও পাচ্ছিলেন না দোকানি। একপর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন এসপি পরিচয় দেওয়া সাগরের মাধ্যমে তিনি প্রতারিত হয়েছেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী দোকানি ২৭ নভেম্বর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার দায়িত্বভার পায় নগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। তারা তদন্ত করে ক্লুলেস মামলাটির রহস্য উদঘাটন করে। পরে রাজশাহীর মোহনপুর এলাকা থেকে শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) অভিযুক্ত সাগরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের বিশেষায়িত সংস্থাটি। গ্রেপ্তারের পর নিজেদের কার্যালয়ে এনে সদরঘাট থানা এলাকার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দিন আজাদীকে বলেন, পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয়ে পুলিশের সঙ্গেই প্রতারণার চেষ্টা করে সাগর। সে নিজেকে পুলিশ উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দেয়। গত তিন বছর ধরে বিভিন্ন এলাকার ৩০ থেকে ৩৫ জন মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে সে। দাবিকৃত অর্থ লেনদেন করে বিভিন্ন বিকাশ ও নগদ একাউন্টের মাধ্যমে। তার বিরুদ্ধে ঢাকা, রাজশাহী, পাবনা ও নওগাঁ জেলার বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য আইনে দুটি ও প্রতারণার অভিযোগে তিনটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। সবশেষ সদরঘাট থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

সাগরের প্রতারণার ধরণ প্রসঙ্গে জানা যায়, প্রথমে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে যেকোনো থানা এলাকায় দায়িত্বরত বিভিন্ন কর্মকর্তার নম্বর নেয় সে পুলিশের এসপি অথবা অ্যাডিশনাল এসপি পরিচয় দিয়ে। এরপর কথা কথা বলে স্থানীয় বিকাশ কিংবা নগদের এজেন্টদের কাছে। ওই কর্মকর্তার মোবাইল দিয়েই কথা বলেন দোকানির সঙ্গে, নেন তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর। এর কিছুক্ষণ পরই ফেলা হয় প্রতারণার জাল। এবার সরাসরি ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করে দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে দিয়ে পাঠানোর কথা বলে অফিশিয়াল কাজে লাগছে বলে বিভিন্ন নম্বরে কয়েক ধাপে হাতিয়ে নেয় টাকা। এভাবে পুলিশকে প্রতারণার ‘হাতিয়ার’ বানিয়ে নওগাঁয় বসে হাতিয়ে নেয় সে লাখ লাখ টাকা। গ্রেপ্তার মো. সাগর ওরফে রিমন পড়ালেখা খুব বেশি করেনি। এসপিএডিশনাল এসপি পরিচয় দেওয়া রিমন পেশায় একজন গাড়িচালক। তার এলাকায় ভাড়ায় চালিত টেম্পু চালায়। তথ্যপ্রযুক্তি সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞান নেই। তবে তার কণ্ঠ শুনে মনে হবে সে অনেক বড় অফিসার। আর তার সেই কণ্ঠের জাল ফেলেই সে আঁকে পুরো প্রতারণার ছক। শুধু সে একা নয়; তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত আছে। এরমধ্যে কেউ কল দেয়, কেউ টাকা ক্যাশ আউট করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আরও জানায়, প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে এ ধরনের প্রতারণার কাজ করে আসছে। এছাড়া ৪৮৩ জন পুলিশ অফিসারের নম্বর ব্যবহার করে সে এসব কাজগুলো করে আসছে। পুলিশের জন্য তার নিজের এলাকা রাজশাহীনওগাঁয় করতে না পেরে সে এখন চট্টগ্রামকে টার্গেট করেছে। আর তার ধারণা ছিল, রাজশাহী বসে চট্টগ্রামে এমন প্রতারণা করলে তাকে কেউ ধরতে পারবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাতকানিয়ায় ব্যবসায়ীর বাড়িতে দুর্বৃত্তের গুলি
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় নৌকা সমর্থকের ওপর হামলার অভিযোগ,অস্বীকার প্রতিপক্ষের