জনতার গণধোলাইয়ে আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক ছিনতাইকারীকে পুলিশের ওপর হামলা করে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক পুলিশ সদস্য ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। পরে ইমাম হোসেন প্রকাশ আকাশ নামের ওই ছিনতাইকারী এবং তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িত তার ভাই, স্ত্রীসহ মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত নগরীর পাঁচলাইশ, পতেঙ্গা, সীতাকুণ্ডের কুমিরা ও ইপিজেডের আকমল আলী রোড এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, আনোয়ারার ইমাম হোসেন প্রকাশ আকাশ, তার ছোট ভাই মো. হোসেন, আকাশের স্ত্রী ও কুমিল্লার মুরাদনগরের সোনিয়া আক্তার, বন্দরের আছমা, পতেঙ্গার মো. মুন্না, সুমাইয়া আক্তার ও ভোলা সদরের রাব্বি।
গ্রেপ্তারকৃত ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে সিএমপির বিভিন্ন থানায় ১২টি, তার ছোট ভাই মো. হোসেনের বিরুদ্ধে ৬ টি এবং রাব্বির বিরুদ্ধে ৪ টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঘটনার সময়ের ধারণকৃত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ছিনতাইকারী ইমাম হোসেন অন্যান্য রোগীর মতো চমেক হাসপাতালের বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার পাহারায় পুলিশের একটি টিমও ছিল সেখানে। এক পর্যায়ে কয়েকজনের একটি দল হঠাৎ পুলিশকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে বসে এবং ছিনতাইকারী ইমাম হোসেনকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে দৌড়ে পালাতে থাকেন। তখন উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাদের পিছু নেন।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান দৈনিক আজাদীকে জানান, ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার গণধোলাইয়ের শিকার হওয়া ইমাম হোসেনকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন তার ছোট ভাই মো. হোসেন ও স্ত্রী সোনিয়া আক্তারসহ অন্য স্বজনরা। ইমাম হোসেনকে তার স্ত্রী বাথরুমে নিয়ে যান এবং সেখানে কৌশলে তার হাতকড়া আলগা করে ফেলে। পরে সেখান থেকে বেডে আনার পর কৌশলে পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া করলে আমাদের এক সদস্যকে তারা ছুরি দিয়ে আঘাত করে।
ঢাকায় পালানোর সময় সীতাকুণ্ড উপজেলার কুমিরা এলাকায় ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে একটি বাস থেকে ইমাম হোসেন ও তার স্ত্রী সোনিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয় বলেও জানান ওসি সোলাইমান। পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার দুপুরে বন্দর থানাধীন বন্দর সিপিআর গেইট সংলগ্ন বন্দর আবাসিক গেইটের পূর্ব পাশের মাঝামাঝি রাস্তার উপর একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ইমাম হোসেন ও শাহাজাদ হোসেন নামের দুইজন ছিনতাইকারী এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ভিকটিম ছিলেন একজন চীনা নাগরিক। দুই ছিনতাইকারী তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে। একপর্যায়ে জনতা তাদের দুজনকে গণধোলাই দেয় এবং পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরপর পুলিশ তাদের দুজনকে প্রথমে বন্দর হাসপাতালে এবং পরে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
শাহাজাদ হোসেনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বন্দর থানা পুলিশ নিয়ে গেলেও পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ইমাম হোসেন। এরমধ্যে মঙ্গলবার রাতেই ইমাম হোসেনের ছোট ভাই মো. হোসেনের নেতৃত্বে রাব্বি, বেলাল, মুন্না, সুনিয়া, আছমা ও সুমাইয়াসহ আরো কয়েকজনের একটি দল দা, কিরিচ ও ছোরা দিয়ে পুলিশ স্কটের উপর হামলা করে ইমাম হোসেনকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় দেলোয়ার হোসেন নামের একজন কনস্টেবল আহত হয়েছেন। তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনার পর থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সময়ে নগরীর পাঁচলাইশ, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় পাঁচলাইশ থানা পুলিশের একটি টিম অভিযান চালায়। উক্ত অভিযানে ছিনতাই হওয়া আসামি ইমাম হোসেন প্রকাশ আকাশ ও তাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় জড়িতসহ মোট ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সোলাইমান দৈনিক আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।