পুলিশ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ঘোষণা এনসিপি-বৈষম্যবিরোধীদের

আন্দোলনের নতুন প্ল্যাটফর্মের আত্মপ্রকাশ

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৪ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪৯ পূর্বাহ্ণ

পটিয়া থানার ওসি জাহেদ নূরের স্থায়ী অপসারণের দাবির পর এবার পুলিশ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহরে তিন সংগঠনের আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে খান তালাত মাহমুদ রাফি মূল বক্তব্য দেন। পুলিশ বাহিনীতে দৃশ্যমান সংস্কার এবং আওয়ামী লীগ আমলে থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সবাইকে বরখাস্ত করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি।

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক জুবাইর হাসান চার দফা দাবি জানিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা দেন। দাবিগুলো হল. পটিয়া থানা থেকে সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি আবু জায়েদ মো. নাজমুন নূরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার ও বিচার, . চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারকে (এসপি) অপসারণ করা, . পুলিশ বাহিনীতে সংস্কারের নির্দেশনা দেওয়া এবং ৪. যেকোনো থানায় আওয়ামী লীগযুবলীগছাত্রলীগের চিহ্নিত কাউকে নেওয়া হলে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এতে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, পটিয়ার ওসি আমাদের সহযোদ্ধাদের আহত করেছে। আমরা দাবি জানিয়েছিলাম, সেই ওসিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করতে হবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, প্রশাসন আমাদের সঙ্গে প্রহসন করেছে। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, পটিয়ার ওসিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমাদের যেসকল ভাইয়েরা আহত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসার দায়ভার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। তিনি বলেন, শুধুমাত্র বদলিবদলি খেলা করে পুলিশ সংস্কার সম্ভব নয়। আমরা দেখেছি, বিগত ১৫ বছরে যারা হাসিনার আমলে ওসি ছিল, তারা হাসিনার পাচাটা গোলাম ছিল। তাদের বর্তমানে দায়িত্বে থাকার কোনো প্রয়োজন আমরা মনে করি না। বরং তাদের বরখাস্ত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। পুলিশকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে আমূল সংস্কারের মুখোমুখি করতে হবে এবং সেটার জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিতে হবে।

পুলিশ সংস্কারের জন্য আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রাফি বলেন, বীর চট্টলার ক্যান্টনমেন্ট খ্যাত ষোলশহর থেকে পুলিশ সংস্কারের আন্দোলনের ঘোষণা করছি। আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশে যারা আছেন, তাদের অনেকেই সংস্কার চান। পুলিশ ভাইদের বলবআপনারা আমাদের ভাই, আমরা চাই, আপনারাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমাদের সাথে রাজপথে আসবেন। আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে আমাদের সাথে সংহতি জানাবেন। আমরা সবাই মিলে পুলিশ সংস্কার করব এবং জুলাই বিপ্লবের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ইমন সৈয়দ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন, যুগ্ম সদস্য সচিব ইবনে হোসাইন জিয়াদ, মুখ্য সংগঠক তাওসিফ ইমরোজ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পুলিশে অনিয়মসীমাহীন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ অব্যাহত আছে। আওয়ামী লীগ ১৭ বছর ধরে যে দলীয়করণ করেছে সেটা এখনও বহাল আছে। জনগণের ভোগান্তি রোধে দ্রুত পুলিশের সংস্কার প্রয়োজন। পটিয়ার ওসি জায়েদ নূরকে অপসারণ না করে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। অথচ আমাদের আন্দোলনটা ছিল তাকে স্থায়ী অপসারণ করা। এতে পুলিশ আমাদের দাবি মানেনি। তাই আমরা এখন থেকে পুলিশ সংস্কার আন্দোলন শুরু করছি। এই সংস্কার সরকারকে চট্টগ্রাম থেকেই শুরু করতে হবে। আমরা জুলাই অভ্যুত্থানে দেখেছি, আমাদের ওপর পুলিশ কীভাবে গুলি চালিয়েছে। আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ও প্রধান কাজ ছিল এই পুলিশকে দৃশ্যমান সংস্কারের মুখোমুখি করা। যেসব পুলিশ সদস্য জুলাই আন্দোলনে আমাদের গুলি করেছে, যারা আমাদের মায়ের বুক খালি করেছে, তাদের শাস্তির মুখোমুখি করা। কিন্তু আমরা দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ অন্তর্বর্তী সরকারের কাছ থেকে পাইনি। এটা তারা তাদের দায়বদ্ধতা মনে করেনি। আমরা তাদের ধিক্কার জানাই।

পুলিশপ্রশাসন সংস্কার আন্দোলন’ এর আত্মপ্রকাশ : পুলিশ ও প্রশাসনের দুর্নীতি, দলীয়করণ এবং অনিয়মের বিরুদ্ধে সার্বিক সংস্কারের দাবিতে চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করলো নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম ‘পুলিশপ্রশাসন সংস্কার আন্দোলন’। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ছাত্রযুব ও ইসলামপন্থী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত এই প্ল্যাটফর্ম আত্মপ্রকাশ করে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় নগরের ২ নম্বর গেটের বিপ্লব উদ্যানে ‘আত্মপ্রকাশ মিছিল’ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকেরা মিছিলটিকে ‘সংস্কার সংগ্রামের প্রথম রাজপথিক সওয়ার’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এনসিপির চট্টগ্রাম মিডিয়া সেলের মুখপাত্র আরফাত আহমেদ রনি জানান, এই প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, হেফাজতে ইসলাম, এনসিপি, যুবশক্তি, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, ছাত্র অধিকার পরিষদ, দাওয়াহ অ্যাসোসিয়েশন, ইসলামিক দাওয়াহ মুভমেন্ট, এসএডি, পুনাব, পুসাব, জুলাই ঐক্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক ছাত্রযুব সংগঠন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচুরি করার সময় দেখে ফেলায় গৃহবধূকে গলা কেটে হত্যাচেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধ৪ জুলাই : সারা দেশে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক, উত্তাল সব বিশ্ববিদ্যালয়