পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য প্রশংসাযোগ্য অপরাধের শাস্তি হওয়া চাই

| বুধবার , ১০ জুলাই, ২০২৪ at ১০:৫৫ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) নবনিযুক্ত কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। গত ৯ জুলাই দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত সংবাদে আমরা তাঁর বক্তব্যকে অভিনন্দিত করছি এবং এটাকে ইতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। তিনি বলেছেন, থানার ওসিদের কোনো অপকর্মের দায় তিনি নেবেন না। ‘দুষ্টু গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, কোনো থানার ওসি আমার আত্মীয় না। কাজে অসঙ্গতির জবাব তাদেরকেই দিতে হবে। কোনো প্রটোকলগার্ড ছাড়াই বিভিন্ন থানা আমি পরিদর্শনে যাব। কখন কোন থানার ওসিকে গাড়িতে তুলে নিয়ে আসব, সে নিজেও জানবে না। ব্যক্তির দায় কোনো সংস্থা নেবে না। আমি অন্যায় করলে সেই দায়দায়িত্ব আমার। এটা পুলিশ বাহিনীর নয়। আমি মানুষ, আমার ভুল হবে। কিন্তু ইনটেনশনাল কোনো ভুল আমার থাকবে না।

গত সোমবার দামপাড়া পুলিশ লাইন মাল্টিপারপাস শেডে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এখন থেকে কোনো থানায় ওপেন হাউস ডে অনুষ্ঠিত হবে না। প্রতিটি থানায় চারটি করে ওয়ার্ড আছে। এলাকার লোকজন থানায় এসে কেন কথা বলবে? পুলিশ তাদের কাছে যাবে। তারা তাদের কথা পুলিশের কাছে বলবে।

আমরা পুলিশ কমিশনারের এমন বক্তব্যে আশ্বস্ত হতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশা করবো, তিনি যে দৃঢ়তা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করলেন, সেই দৃঢ়তা যেন অটুট থাকে।

পুলিশের অপরাধ প্রবণতার বিষয়টি আজ নতুন নয়। অভিযোগ আছে, পুলিশের একশ্রেণির সদস্যের বিরুদ্ধে ঘুষদুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানাবিধ বেআইনী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ সবসময়ই ছিল এবং আছে। তবে গত কয়েক বছরে একশ্রেণির পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে নারীর শ্লীলতাহানি, ছিনতাই, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, মাদকইয়াবা চোরাচালান, মানবপাচারসহ নানাবিধ অপরাধে যুক্ত থাকার অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে। তবে এ সব অপরাধের দায়ে কাউকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার খবর খুব একটা জানা যায় না। আরো অভিযোগ রয়েছে, দিন দিন অপরাধ দমন না করে নিজেরা বারবার তারা জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। এর মধ্য দিয়ে গোটা পুলিশ বাহিনীর ইমেজ বা ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। পুলিশদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি খুবই উদ্বেগজনক। গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য এটি সহায়ক নয়। যারা অপরাধে জড়ান তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের অভ্যন্তরীণ স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করতে হবে। তা না হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা যতটুকু আছে সেটিও হারাবে।

এছাড়া সামপ্রতিক সময়ে খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা রীতিমত উদ্বেগজনক। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এসব খুনের বেশির ভাগই ঘটেছে সামাজিক ও পারিবারিক কারণে। সাধারণত পারিবারিক কলহ, অর্থ লেনদেন, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব বা এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাতে এঁরা খুন হয়েছেন। আশঙ্কাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড। অপর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সারাদেশে প্রতিদিন গড়ে ১৪/১৫ জন খুন হচ্ছেন। তবে এসব খুনের বেশিরভাগ ঘটছে পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে। বাবা অথবা মা নিজের শিশু সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করছেন। বাবা অথবা মাও খুন হচ্ছেন সন্তানের হাতে। রাস্তা বা ডোবা থেকে উদ্ধার হচ্ছে তরুণীর খণ্ডিত লাশ। এতে উদ্বেগউৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ছে সচেতন নাগরিক এমনকি জনসাধারণের মাঝে। এভাবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে হত্যাকাণ্ড।

সমাজবিজ্ঞানী ও আইনজীবীরা দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছেন, বিচার বা যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত না হওয়াই সমাজে অনেক অপরাধের পুনরাবৃত্তির অন্যতম প্রধান কারণ। অপরাধী যখন বিচারের মুখোমুখি হয়েও আইনের ফাঁকফোকর গলে পার পেয়ে যান, তখন তার মধ্যে এই ধারণাই দৃঢ় হয় যে, অপরাধ যত বড়ই হোক তিনি আবারও পার পেয়ে যাবেন। চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ থেকে শুরু করে প্রতারণা, জালিয়াতি, অর্থ আত্মসাৎ কিংবা ঋণখেলাপি পর্যন্ত সব ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রেই অপরাধীদের মধ্যে এমন মনস্তত্ত্ব তৈরি হতে পারে। বিচারের ফাঁক গলে অপরাধীদের এভাবে পার পেয়ে যাওয়ার সঙ্গে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র আর রাজনৈতিক ক্ষমতার যোগসাজশ যুক্ত, এমন অভিযোগ প্রায়ই মেলে। সামগ্রিকভাবে একেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বলে আখ্যায়িত করা হয়। এরই অনিবার্য ফল হলো, চিহ্নিত অপরাধীদের বারবার একই অপরাধে যুক্ত হওয়া। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে, পুলিশের তালিকাভুক্ত এমন আসামিরা জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। আইন ও অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ সংকটের নেপথ্যে পুলিশের পেশাদারত্ব ও বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার পাশাপাশি রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার দায়ী। বলা যায়, মানুষ মানসিকভাবে হিংস্র হয়ে উঠছে। যা তাদেরকে অপরাধপ্রবণ করে তুুলছে। এ বিষয়ে পুলিশ কমিশনারসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ভাবতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে