নগরীর বায়েজিদে রুবেল নামে এক যুবককে হত্যা চেষ্টার পর পঙ্গু হওয়ার ঘটনায় থানা পুলিশের তদন্তে বাদ দেওয়া হয়েছিল প্রধান আসামিসহ কয়েকজনকে। এখন তাদের অন্তর্ভুক্ত করে আদালতে সম্পূরক চার্জশিট জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইট, বালু ও সিমেন্ট ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষের রোষানলে পড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে।
২০১৮ সালের ১৯ মে বায়েজিদ জেড এ আবাসিক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। তখন ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনকে আসামি করে বায়েজিদ থানায় মামলা করেছিলেন ভুক্তভোগীর বড় ভাই আরিফুল ইসলাম। ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নুরুল ইসলাম আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটে এজাহারনামীয় প্রধান আসামি, পুলিশের সোর্সসহ বেশিরভাগ আসামির এ অপরাধে কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তাদের অব্যাহতি চেয়েছিলেন। এ সময় মহিন উদ্দিন (৩১), সোহেল রানা প্রকাশ নোমান মিয়া (২৪) ও দেলোয়ার হোসেনকে (২৭) অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। পরবর্তীতে আদালত মামলাটি পুনরায় অধিকতর তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আদালতের নির্দেশে পিবিআইয়ের সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস মামলাটির সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। এতে থানা পুলিশের তদন্তে বাদ দেওয়া প্রধান আসামিসহ আরও ৫ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে আটজনের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
পিবিআইয়ের চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন মামলার প্রধান আসামি বাহার উদ্দিন বাহার (৪৬) মহিন উদ্দিন (৩১), সোহেল রানা প্রকাশ নোমান মিয়া (২৪), দেলোয়ার হোসেন (২৭), মোজাম্মেল হোসেন মিন্টু (৩৬), আনোয়ার হোসেন (৪৮), শাহজাহান (৩৫) ও মোহাম্মদ বাবলু (৩২)।
পিবিআই তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, বায়েজিদ থানায় আরেফিন নগর ও জেডএ আবাসিক এলাকায় ভিকটিম রুবেল তার চাচা নুর হোসেনের ইট, বালু ও সিমেন্টের নতুন ব্যবসাটি দেখাশুনা করতেন। আগে থেকে বাহার, মোজাম্মেল ও আনোয়ার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ওই এলাকায় বাজার মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দামে ইট, বালু ও সিমেন্ট সরবরাহ করে আসছিল। ওই এলাকায় ভবন নির্মাণে এসব কাঁচামাল সামগ্রীর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নুর হোসেনের ব্যবসারও প্রসার হয়েছিল। এটা নিয়ে আসামিরা রুবেল ও তার চাচাকে নিজেদের সাথে ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয়। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে ব্যবসা ছাড়ার হুমকি দেয় আসামিরা। এটা নিয়ে উভয় পক্ষের কথা কাটাকাটি হয়। এরই বিরোধের জের ধরে ২০১৮ সালে ১৯ মে রুবেলকে বায়েজিদ জেড এ আবাসিক এলাকার একটি দোকানে একা পেয়ে আসামিরা ধারালো ছুরি, হাতুড়ি, লোহার রড, অ্যাঙ্গেল দিয়ে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। পরে রুবেল সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লে তাকে মৃত ভেবে এ ঘটনায় এলাকাবাসীদের কাউকে সাক্ষী না দেওয়ার হুমকি দিয়ে আসামিরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ভিকটিমের মেডিকেল রিপোর্টগুলোর ভিত্তিতে পিবিআই তদন্তে বলেছে, ভিকটিম মাথা, বুক, পাসহ শরীরের একাধিক জায়গায় গুরুতর জখম হয়। এতে ভিকটিম চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায়।
পিবিআই অভিযোগপত্রে উল্লেখ করে, বাহারের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ, বায়েজিদ ও খুলশী থানায় হত্যা চেষ্টা, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে সাতটি মামলা রয়েছে। বায়েজিদে পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, মারামারিসহ বায়েজিদে ৫টি ও পাঁচলাইশে একটি মামলা রয়েছে। মোজাম্মেল হোসেন প্রকাশ মিন্টুর বিরুদ্ধে বায়েজিদ ও চকবাজার থানায় হত্যা চেষ্টা, মাদক, আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নসহ ৬টি মামলা রয়েছে। দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় বায়েজিদে পৃথক দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়া সোহেল রানা প্রকাশ নোমান মিয়ার বিরুদ্ধে বায়েজিদে হত্যা চেষ্টা ও ধর্ষণের দুটি এবং মহিন উদ্দিনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা চেষ্টার মামলা রয়েছে। এ সময় পিবিআই বাকি সাত আসামির অপরাধের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ার কথা বলে তাদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করে।