পুলিশে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামসহ সারা দেশের ৫২৭টি থানায় লটারির মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিয়োগের একটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলায় পুলিশ সুপার পদে লটারির মাধ্যমে পদায়নের পর একই ধারায় লটারির মাধ্যমে ওসি পদায়ন সম্পন্ন করা হচ্ছে। এসপি এবং ওসির পর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের আরো শীর্ষ পদে নির্বাচনের আগে রদবদল হতে পারে বলে সূত্র আভাস দিয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশে বড় ধরনের রদবদলের ঘটনা ঘটছে। দেশের ৬৪ জেলায় পুলিশ সুপার পদে ইতোমধ্যে লটারির মাধ্যমে রদবদল করা হয়েছে। গতকাল ওসিদের রদবদলেও লটারির আশ্রয় নেয়া হয়। তদবির এবং আর্থিক লেনদেনে বদলির ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য লটারির আশ্রয় নেয়া হচ্ছে বলে পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, একটি নতুন সিস্টেম চালু করা হয়েছে। সরকার সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বদলি ও পদায়নের বিষয়টি সম্পন্ন করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের কাছ থেকে ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার সৎ, দক্ষ এবং নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত তালিকা থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং পুলিশ সদর দপ্তর মিলে লটারির মাধ্যমে দেশের ৫২৭টি থানায় নতুন ওসি পদায়নের প্রস্তুতি নেয়া হয়। তবে মহানগরীগুলোর ওসিদের ব্যাপারে গতকাল কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৃহত্তর চট্টগ্রামের মোট ৫৪টি থানার ওসিকে বদলি করার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের ১৭টি থানা, কঙবাজারের ৯টি থানা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটির ২৮টি থানায় নতুন ওসি পদায়ন করা হচ্ছে। লটারির মাধ্যমে এসব কর্মকর্তা নির্বাচিত করা হয়। তাদেরকে যে যে থানায় দেয়া হচ্ছে সেখানে ‘প্রস্তাবিত’ লিখে রাখা হয়েছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে পুলিশ সদর দপ্তর সারা দেশে পুলিশের রদবদলের বিষয়টি সম্পন্ন করছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের আইন–শৃঙ্খলা রক্ষায় যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য সরকার আগেভাগে বিষয়টি গুছিয়ে রাখছে।
লটারিতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১১ জেলায় ১১১ থানা, ঢাকা রেঞ্জের ১৩ জেলায় ৯৮ থানা, খুলনা রেঞ্জের ১০ জেলায় ৬৪ থানা, ময়মনসিংহ রেঞ্জের ৪ জেলার ৩৬ থানা, বরিশাল রেঞ্জের ৬ জেলার ৪৬ থানা, সিলেট রেঞ্জের ৪ জেলায় ৩৯ থানা, রাজশাহী রেঞ্জের ৮ জেলায় ৭১ থানা এবং রংপুর রেঞ্জের ৮ জেলার ৬২ থানার ওসিকে পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
চট্টগ্রামের মীরসরাই থানায় ফরিদা ইয়াসমিন (নিজ জেলা ফরিদপুর), জোরারগঞ্জ থানায় কাজী নাজমুল হক (নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সীতাকুণ্ড থানায় মহিনুল ইসলাম (নিজ জেলা বগুড়া), সন্দ্বীপ থানায় জিয়াউল হক (নিজ জেলা গাজীপুর) হাটহাজারী থানায় জাহিদুর রহমান (নিজ জেলা রাজবাড়ী), ফটিকছড়ি থানায় মোহাম্মদ সেলিম (নিজ জেলা চাঁদপুর), ভূজপুর থানায় বিপুল চন্দ্র দে (নিজ জেলা গোপালগঞ্জ), রাউজান থানায় মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম (নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া), রাঙ্গুনিয়া থানায় আরমান হোসেন (নিজ জেলা কুমিল্লা), দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানায় মোহাম্মাদ হিলাল উদ্দিন আহমেদ (নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ), সাতকানিয়া থানায় মঞ্জুরুল হক (নিজ জেলা ঢাকা), লোহাগাড়া থানায় আব্দুল জলিল (নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জ), চন্দনাইশ থানায় ইলিয়াছ খান (নিজ জেলা চাঁদপুর), পটিয়া থানায় আবু জায়েদ নাজমুন নুর (নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর, পাঁচ মাস আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে পটিয়া থেকে বদলি হয়েছিলেন), বোয়ালখালী থানায় মাহফুজুর রহমান (নিজ জেলা খুলনা), বাঁশখালী থানায় খালেদ সাইফুল্লাহ (নিজ জেলা ঢাকা) এবং আনোয়ারা থানায় জুনায়েত চৌধুরীকে (নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া) পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
কঙবাজারের উখিয়া থানায় নূর আহমদ (নিজ জেলা নোয়াখালী), কুতুবদিয়া থানায় মাহবুবুল হক (নিজ জেলা গাজীপুর), রামু থানায় মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া (নিজ জেলা কুমিল্লা), ঈদগাঁও থানায় এটিএম শিফাতুল মজুমদার (নিজ জেলা নীলফামারী), চকরিয়া থানায় মোহাম্মদ মনির হোসেন (নিজ জেলা কুমিল্লা), টেকনাফ থানায় সাইফুল ইসলাম (নিজ জেলা কুমিল্লা), মহেশখালী থানায় মজিবুর রহমান (নিজ জেলা কুমিল্লা), পেকুয়া থানায় খাইরুল আলম (নিজ জেলা কুমিল্লা) এবং কঙবাজার সদর থানায় ছমি উদ্দিনকে (নিজ জেলা চট্টগ্রাম) পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
রাঙামাটির জুড়াছড়ি থানায় মুহাম্মদ মঈন উদ্দীন (নিজ জেলা চট্টগ্রাম), রাঙামাটির কোতোয়ালী থানায় জসীম উদ্দীন (নিজ জেলা বরগুনা), নানিয়ারচর থানায় তফিকুল ইসলাম (নিজ জেলা কুষ্টিয়া), কাপ্তাই থানায় শেখ মাহমুদুল হাসান রুবেল (নিজ জেলা রংপুর), রাজস্থলী থানায় খালেদ হোসেন (নিজ জেলা নোয়াখালী), কাউখালী থানায় এনামুল হক চৌধুরী (নিজ জেলা চট্টগ্রাম), বরকল থানায় রফিকুল ইসলাম (নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া), লংগদু থানায় জাকারিয়া (নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জ), বিলাইছড়ি থানায় মাসরুরুল হক (নিজ জেলা চট্টগ্রাম), সাজেক থানায় তোফাজ্জল হোসেন (নিজ জেলা ঢাকা), বাঘাইছড়ি থানায় নাছির উদ্দিন মজুমদার (নিজ জেলা কুমিল্লা) এবং চন্দ্রঘোনা থানায় এম সাকের আহমেদকে (নিজ জেলা কঙবাজার) পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা থানায় মুহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন (নিজ জেলা চট্টগ্রাম), খাগড়াছড়ি সদর থানায় মুহাম্মদ কায় কিসলু (নিজ জেলা চট্টগ্রাম), দীঘিনালা থানায় ইকবাল বাহার চৌধুরী (নিজ জেলা চট্টগ্রাম), পানছড়ি থানায় ফেরদৌস ওয়াহিদ (নিজ জেলা নড়াইল), রামগড় থানায় মুহাম্মদ নাজির আলম (নিজ জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়া), লক্ষ্মীছড়ি থানায় সাইফুল ইসলাম সোহাগ (নিজ জেলা মাদারীপুর), মানিকছড়ি থানায় মাসুদ পারভেজ (নিজ জেলা চাঁদপুর), মহালছড়ি থানায় মির্জা জহির উদ্দিন (নিজ জেলা চট্টগ্রাম) এবং গুইমারা থানায় সোহরাওয়ার্দীকে (নিজ জেলা কুমিল্লা) পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থানায় হুমায়ূন কবীর (নিজ জেলা কিশোরগঞ্জ), রুমা থানায় মানস বড়ুয়া (নিজ জেলা চট্টগ্রাম), বান্দরবান সদর থানায় শাহেদ পারভেজ (নিজ জেলা ঢাকা), লামা থানায় মুহাম্মদ শাহজাহান কামাল (নিজ জেলা লক্ষ্মীপুর), আলী কদম থানায় আলমগীর হোসেন শাহ (নিজ জেলা নেত্রকোনা), থানচি থানায় কানন সরকার (নিজ জেলা মুন্সীগঞ্জ) এবং নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় আবদুল বাতেন মৃধাকে (নিজ জেলা চাঁদপুর) পদায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে এসব বদলি ও পদায়নের প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে আভাস দিয়ে সূত্র বলেছে, শুধু ইন্সপেক্টর নয়, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের শীর্ষ পদেও বড় ধরনের রদবদলের প্রক্রিয়া চলছে।












