পুলিশে তবুও কমছে না অপরাধে জড়ানোর হার

বিভাগীয় মামলা, সাজা

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ at ৬:০৬ পূর্বাহ্ণ

অপরাধে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারিসহ বিভাগীয় মামলায় বিচারে সাজা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু অপরাধে জড়ানোর হার কমছে না। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে মামলা হচ্ছে তা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি, ইয়াবা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে টাকা আদায়, টাকা না পেয়ে ক্রসফায়ারের নামে হত্যাসহ নানা ধরনের অপরাধ করেছেন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যরা। তাছাড়া অপরাধী গ্রেপ্তারে সোর্স হিসেবে যাদের রাখা হয় তাদেরকে ব্যবহার করে পুলিশ সদস্যরা অপরাধ ঘটাচ্ছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের মামলায় নিরপেক্ষ তদন্তে দোষীদের চিহ্নিত করে পুলিশ বাহিনীর ইমেজ বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। সিএমপির কমিশনার সালেহ্‌ মোহাম্মদ তানভীর এ প্রসঙ্গে বলেন, অপরাধের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত হোক না কেন কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। সে পুলিশ সদস্য হলেও আইন সবার জন্য সমান। একই ভাবে সোর্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গোপন সংবাদ বের করাই সোর্স ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্য। এক্ষেত্রে একজন সাধারণ মানুষও সোর্স হতে পারে। আমরা মনে করতে চাই, পুরো নগরবাসীই আমাদের সোর্স। এজন্য কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে জোরদার করেছি।
জানা গেছে, পুলিশ বাহিনীর নিজস্ব আইনে তদন্ত পরবর্তী অভিযোগ প্রমাণ সাপেক্ষে সাজা প্রদান করে পুলিশ সদর দফতরের ডিসিপ্লিন অ্যান্ড প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড শাখা। গুরুদণ্ডের মধ্যে রয়েছে বেতন কর্তন ও এক পদ নিচে নামিয়ে দেওয়া। লঘুদণ্ড হচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য তিরস্কার ও সতর্ক করা। আর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণ না হলে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় আনিত নানা অভিযোগ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, সর্বশেষ গত ৭ ফেব্রুয়ারি আনোয়ারা উপজেলায় গভীর রাতে বাড়ি থেকে আবদুল মান্নান নামে এক ঠিকাদারকে তুলে নিয়ে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ৬ কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের পূর্ব বৈরাগ এলাকার শফি তালুকদারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর নগরীর কোতোয়ালী থানার সিনেমা প্যালেস এলাকার আদর আবাসিক হোটেলে অস্ত্র বিক্রির সময় স্বরূপ বড়ুয়া নামে এক পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা পুলিশ।
গত ২০ ডিসেম্বর আবু জাফর নামে এক ব্যক্তি জামালপুর থেকে সীতাকুণ্ডে আসেন পিকআপ ভ্যান কিনতে। পথে দুই পুলিশ সদস্য তাকে ইয়াবা ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে আটক করে তার কাছে থাকা ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে গাড়িতে তুলে দেয়।
চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার বিষয়টা জানতে পেরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর সীতাকুণ্ড মডেল থানার এস আই সাইফুল ইসলাম ও কনস্টেবল সাইফুল আলমকে সাসপেন্ড করা হয় এবং তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
রাঙ্গুনিয়া থানায় কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল মো. মোশারফ হোসেন (৩৭) অন ডিউটিতে থাকাবস্থায় নগরীতে ইয়াবা বিক্রির সময় ধরা পড়েন। গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যায় চকবাজার থানাধীন ওয়াসা মোড় এলাকায় হক লাইব্রেরির সামনে থেকে মো. মোশারফ হোসেনকে ২ হাজার ৮৭৫ পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।
সমর কৃষ্ণ চৌধুরী নামে এক আইনজীবীর সহকারীকে চট্টগ্রাম শহর থেকে তুলে নিয়ে বোয়ালখালী থানা পুলিশের সাজানো অস্ত্র মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে আট পুলিশ সদস্যসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার সমর কৃষ্ণ চৌধুরী এ মামলা দায়ের করেন।
ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে ২৬ আগস্ট আদালতে মামলা করেন ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন। একই দিন ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে ভুজপুর থানার ওসিসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
১৯ আগস্ট ৮ লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ইয়াবা দিয়ে চালান দেয়ার অভিযোগে বায়েজিদ থানার ওসি ও ওসি (তদন্ত) সহ আট পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ব্যবসায়ী মো. আবদুল ওয়াহেদের করা মামলাটি সিএমপির উত্তর জোনের উপ-কমিশনারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
১৮ আগস্ট পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ আদায়ের পর আরও পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় বন্দুকযুদ্ধের নামে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলার সাদ্দাম হোসেন নামে এক যুবককে হত্যার অভিযোগে সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন নিহতের মা গুল চেহের বেগম।
১৬ আগস্ট পটিয়া উপজেলায় এক প্রবাসীকে তুলে নিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে চকরিয়া থানার ওসিসহ দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন নিহতের মামা মুক্তিযোদ্ধা আহমদ নবী।
কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশ তল্লাশি চৌকিতে গত বছর ৩১ জুলাই রাতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬)। ওই ঘটনার বিচার চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন তার বড় বোন শারমিন। এ ঘটনার পর পুরো পুলিশ বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়।
১৬ জুলাই রাতে চান মিয়াসহ আরেকজন সোর্সকে সঙ্গে নিয়ে আগ্রাবাদের বাদামতলী মসজিদ গলিতে সালমান ইসলাম মারুফ নামে এক কিশোরকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করে ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল। এ সময় তার মা-বোনকে মারধর করে তারা। এতে অপমানে আত্মহত্যা করে ওই কিশোর। পুলিশের তদন্তে এ ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এসআই হেলালকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
২৯ এপ্রিল নগরীর টেরিবাজার এলাকায় মারধরের শিকার হয়ে এক দোকান কর্মচারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওই এলাকায় টহল টিমে থাকা কোতোয়ালী থানার এএসআই কামরুল ও দুই কনস্টেবলকে ক্লোজড করা হয়।
নগরীর প্রবেশ পথে বসানো চেকপোস্টে মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট জাকির হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয় গত বছরের ১৫ এপ্রিল। রাউজান থেকে শহরে কর্মস্থলে আসার পথে এক সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল জাহাঙ্গীরকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয় গত ১০ এপ্রিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঠাঁই হলো ছোটমণি নিবাস খালি গা, ডাস্টবিনে নবজাতক
পরবর্তী নিবন্ধকথিত যুবলীগ ক্যাডার একদিনের রিমান্ডে