সাবেক সচিব, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক, কূটনীতিবিদ, কন্ঠ শিল্পী এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী (বোরহান সিদ্দিকী) আর নেই। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে গত শনিবার দিবাগত রাত ১টার দিকে ইন্তেকাল (ইন্নালিল্লাহে..রাজিউন) করেন। বহুগুণের অধিকারী বোরহান সিদ্দিকী ১৯৮৯-৯০ সালে নামিবিয়ায় জাতিসংঘের অধীনে শান্তিরক্ষী মিশনে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৯-২০০০ সালে বাংলাদেশ পুলিশের ১৬তম পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে সততা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি পানি সম্পদ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ২০০৪ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর একাধিক আন্তর্জাতিক পানি গবেষণা, আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন প্রকল্পের এসএমই ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেন। ২০০৬ সালে তিনি জাতীয় প্রকল্প কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বোরহান সিদ্দিকীর জন্ম সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ রহমতনগর গ্রামে। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার এল কে সিদ্দিকীর ছোটভাই। ব্যক্তিগত জীবনে বোরহান সিদ্দিকী ১৯৭১সালে মিরসরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান রেহানা সিদ্দিকীকে বিয়ে করেন। এ গুণী দম্পতির রয়েছে এক ছেলে লুৎফি সিদ্দিকী ও এক মেয়ে হুসনা সিদ্দিকী। ছেলে লুৎফি সিদ্দিকী ইউনাইটেড ব্যাংক অফ সুইজারল্যান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কর্মরত।
বোরহান সিদ্দিকী ও রেহানা সিদ্দিকী দম্পতি সংগীতে বেশ পারদর্শী ছিলেন। বোরহান সিদ্দিকী অবসরে এসে গানের রেকর্ডে মনোনিবেশ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন আধুনিক স্টুডিও। এই শিল্পী দম্পতির কণ্ঠে ধারণকৃত বাংলা গানের সুবর্ণ সময়ের দুই শ’ গানের দুটি সিডি প্রকাশিত হয়েছে সমপ্রতি। বোরহান সিদ্দিকীর কণ্ঠে রবীন্দ্রনাথের প্রেম, পূজা প্রকৃতি পর্যায়ের ১০০টি গান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে ‘অপরূপ তোমার বাণী’। আর রেহানা সিদ্দিকীর কণ্ঠে ধারণ করা হয়েছে ৬০টি মৌলিক ও ৪০টি পঞ্চকবির গান। তাঁর অ্যালবামের নাম ‘কিছু কথা কিছু স্মৃতি ’।
মরহুমের প্রথম জানাজা গতকাল রোববার ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ লাইন মাঠে সকাল দশটায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে জানাজায় অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ বিপিপিএম। বাদ আছর নিজ গ্রাম সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ রহমতনগর জামে মসজিদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তাঁর জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এই গুণীজনের মৃত্যুতে সাংসদ দিদারুল আলম, সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল বাকের ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন, উপজেলা বিএনপি, সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
কলেজিয়েটসের শোক : চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সমিতি চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস এর এক শোক বিবৃতিতে বলা হয়, এ ওয়াই বি আই সিদ্দিকী ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ১৯৬০ (এসএসসি) সালের প্রাক্তন ছাত্র। তাঁর মৃত্যুতে চট্টগ্রাম কলেজিয়েটস এর সভাপতি ও দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, সিনিয়র সহসভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোসতাক হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল আনোয়ার হিরণ সহ কলেজিয়েটস কার্যকরি কমিটির অন্যান্য কলেজিয়েটসবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।