নগরীর কোর্টহিলে পূর্ব নির্ধারিত ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল সকাল ১১ টার পর কোর্টহিলের দোয়েল চত্বরে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান দিতে দিতে জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ করেন দুই হাজারের উপর আন্দোলনকারী। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবির উপস্থিতিতে যা বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। ওই সময় মূল আদালত ভবন ও জেলা প্রশাসনের যাতায়াত পথ অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়ে। থানা ও কারাগার থেকে কোনো আসামিকে আনা–নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে আদালতের কার্যক্রমে কোন বিঘ্ন ঘটেনি। সাক্ষ্যগ্রহণ থেকে শুরু করে অন্যান্য বিচারিক কার্যক্রম ছিল স্বাভাবিক।
পরে বিকাল সাড়ে তিনটায় বিএনপিপন্থী আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীরা কোর্টহিল প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যান। এর আগে আন্দোলনকারীদের পাঁচজন প্রতিনিধির সাথে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসনের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ও সমিতির সভাপতি বসে কথা বলেন। আন্দোলনকারীদের কোনো রকম তল্লাশি, হয়রানি, গ্রেপ্তার করা হবে না এমন নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়।
কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সারাদেশে ছাত্র জনতার উপর হামলা, হত্যা, গণগ্রেপ্তার, মামলা ও গুমের প্রতিবাদে পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পালন করতে কোর্টহিলের ফটকে সকাল ১১ টায় জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে কোর্টহিলে প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয় তাদের। কিন্তু আন্দোলনকারীরা পুলিশের বাধা ডিঙিয়ে কোর্টহিলে ঢুকে পড়েন। অবস্থান নেন আইনজীবীদের দোয়েল ভবন ও এনেঙ ভবনের সামনে। আরো উপরে উঠতে চাইলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের প্রতিরোধে সেটি সম্ভব হয়নি। আন্দোলকারীদের সাথে ছিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আন্দোলনকারী ও বিএনপিন্থী আইনজীবী এবং আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে নানা স্লোগান দেন। এ সময় কথা কাটাকাটি, হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তবে এর বেশি কিছু হয়নি।
সরেজমিন দেখা গেছে, এই আন্দোলনে অনেক অভিভাবক হাজির হয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিতেই তারা আন্দোলনে উপস্থিত হয়েছেন। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের কাছে জানতে চাইলে তারা আজাদীকে এ কথা জানান।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, চট্টগ্রামের নেতা ও জেলা পিপি শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বলেন, কোর্ট হিলে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে অনেকগুলো। জেলা প্রশাসনের রেকর্ড শাখা থেকে শুরু করে আদালতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র রয়েছে। এসব যাতে অক্ষত থাকে সে জন্য আমরা আন্দোলকারীদের উপরে উঠতে দেইনি। আমাদের প্রতিরোধের মুখে তারা দোয়েল ভবন বা এনেঙ ভবন অতিক্রম করতে পারেনি। আন্দোলন নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।
এদিকে শুরুর দিকে তথা কোর্টহিলে প্রবেশের সময় প্রবেশ মুখ থেকে কয়েকজন আন্দোনকারীকে আটক করা হলেও পরে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে আজাদীকে জানিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, জেলা জজ, কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, এডিসি প্রসিকিউশন সবাই বিষয়টি আমাকে মধ্যস্ততা করতে বলেন। সেই অনুযায়ী আন্দোলনকারীদের পাঁচজন, থানার ওসি, দুজন ম্যাজিস্ট্রেট বসে কথা বলেছি। সেখানে আন্দোলকারীদের কোনো রকম তল্লাশি, হয়রানি, গ্রেপ্তার করা হবে না এমন আশ্বাস দেওয়া হলে আন্দোলনকারী বিকাল সাড়ে ৩ টায় কোর্টহিল ছেড়ে যান। আন্দোলনে অংশ নেওয়া এমইএস কলেজের আরিফুল নামের একজন শিক্ষার্থী আজাদীকে বলেন, আমাদের অনেক ভাই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে আমরা জড়ো হয়েছি। সারাদেশে চলছে আমাদের মার্চ ফর জাস্টিস।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় বেশ কয়েকবার বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির মধ্যেই নানা পোস্টার হাতে স্লোগান দেন আন্দোলকারীরা। বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে এ সময় কারো মাথায় ছাতা, আবার কারো মাথায় পলিথিন দেখা গেছে। অনেকের মাথার উপর কিছুই ছিল না। আইনজীবীদের একটি দল আন্দোলকারীদের পানি, কলা সরবরাহ করেছেন।
আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের অনেক ভাই ইতিমধ্যে শহীদ হয়েছেন। অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। আমরা আজকে এসবের প্রতিবাদে জড়ো হয়েছি। আমরা এসবের বিচার চাই।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের সহসমন্বয়ক ইশা দে আজাদীকে বলেন, সব হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত, বিচার ও আগের ৯ দফা দাবি বাস্তবায়ন চাই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুল হক আজাদীকে বলেন, আন্দোলনকারীরা কোর্টহিলের মূল চত্বরে যাননি। তারা আইনজীবীদের ভবন দোয়েল ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে নিজেরা ওই স্থান ত্যাগ করেন। কোনো রকম সমস্যা হয়নি। নগর পুলিশের উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) এএনএম হুমায়ুন কবির আজাদীকে বলেন, আন্দোলকারীরা নিরাপদে যাতে স্থান ত্যাগ করতে পারেন সে দাবি জানালে আমরা তাদের আশ্বস্ত করি। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা সরে যান।