পুলিশকে যে তথ্য দিল গ্রেপ্তার হওয়া রাসেল

কেইস ডকেট গায়েব

হাবীবুর রহমান | শুক্রবার , ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৯:৩৪ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম আদালতের মহানগর পিপি অফিসের ১,৯১১ টি মামলার কেইস ডকেট গায়েবের ঘটনায় চারিদিকে যখন তোলপাড় চলছিল, ঠিক তখন আদালতের নাকের ডগায় বসে একটি চায়ের দোকানে দিব্যি চাকরি করে যাচ্ছিলেন ঘটনায় জড়িত এবং গ্রেপ্তার মো. রাসেল। গতকাল নগরীর বাকলিয়ার বউবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ এবং তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নগরীর কোতোয়ালীর সতীশ বাবু লেইনের মফিজের ভাঙারি দোকান থেকে ৯ টি বস্তা ভর্তি কেইস ডকেট উদ্ধার করা হয়। এর আগের দিন বুধবারও তিনি আদালত পাড়ার নারী শিশু বিল্ডিং লাগোয়া গলির ভেতরে থাকা চায়ের দোকানে কাজ করেছিলেন। চায়ের দোকানটি নাছির নামের একজনের। গ্রেপ্তার পরবর্তী মো. রাসেল পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছেন। পুলিশের কাছে তিনি আরো জানান, আদালত পাড়ায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন চায়ের দোকানে কাজ করে আসছেন। নারীশিশু বিল্ডিং লাগোয়া গলির ভেতরের নাছিরের দোকানের আগে ঘটনাস্থল নতুন আদালত ভবনের তৃতীয় তলার বাম পাশে থাকা একটি চায়ের দোকানে তিনি কাজ করতেন। এ দোকান চালান কুদ্দুস নামের এক ব্যক্তি। কুদ্দুসের চায়ের দোকানের অদূরেই চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অফিস। পুলিশকে মো. রাসেল জানান, কেইস ডকেট ভর্তি ৯টি বস্তার মধ্যে তিনি শুধু দুটি বস্তার বিষয়ে অবগত। এ দুটি বস্তা তিনি মাথায় করে আদালত ভবন থেকে নামিয়েছেন এবং মাথায় করে তিনি সেগুলো কোতোয়ালী থানাধীন সতীশ বাবু লেইন এলাকার মফিজের ভাঙারির দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন। ১৬ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করে তিনি মোট ৮১০ টাকা পেয়েছিলেন। এরমধ্যে একটি বস্তা ৪৪০ টাকা এবং অপর বস্তা ৩৭০ টাকায় বিক্রি করেন। বিক্রি করে পাওয়া টাকা তিনি খরচ করে ফেলেছেন। বাকী কেইস ডকেট ভর্তি বস্তা কারা ভাঙারির দোকানে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি তা জানেন না। তিনি জানান, পরিষ্কারের উদ্দেশ্যে আদালতের ক্লিনাররা তাকে কেইস ডকেট ভর্তি বস্তা সরিয়ে ফেলে দিতে বলেছিলেন। নিজ থেকে তিনি সেগুলো সরাননি। এদিকে আদালতে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা দেখেছেন, গত ২৬ ডিসেম্বর মো. রাসেলকে ঘটনাস্থল আদালত ভবনে উঠতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু সেদিন তাকে কোনো বস্তা নামাতে দেখা যায়নি। ২৭ ডিসেম্বর ও ২৮ ডিসেম্বর তিনি ভবনটিতে আবারো উঠেন। এবার তিনি খালি হাতে নামেননি। ২৭ ডিসেম্বর বিকালে একটি এবং ২৮ ডিসেম্বর বিকালে একটি বস্তা তাকে নামাতে দেখা গিয়েছিল। বাকী বস্তাগুলো রাসেল যদি না সরিয়ে থাকেন তাহলে কারা সরিয়েছেন, অন্য কেউ সরিয়েছেন কী না? এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আফতাব হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা আরো বিশদভাবে বিষয়টি দেখছি। তার সাথে আরো কেউ ঘটনায় জড়িত রয়েছে কী না তা আমরা খতিয়ে দেখব। এ ঘটনার পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে তাও খতিয়ে দেখা হবে। এ জন্য মো. রাসেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তা মো. আফতাব হোসেন বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা হন্যে হয়ে খুঁজছিলাম জড়িতদের ও গায়েব হওয়া কেইস ডকেটের। কোতোয়ালী এলাকার প্রায় ১০ থেকে ১৫ টি ভাঙারি দোকানে গিয়ে আমরা ব্যর্থ হই। একপর্যায়ে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া রাসেলের ছবি সোর্সকে দেখাতেই তিনি তাকে চিনতে পারেন। বলেন যে, এ রাসেল তো নগরীর বাকলিয়ার বউবাজারে থাকেন। সাথে সাথেই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি। অভিযানের একপর্যায়ে আমরা তাকে একটি চায়ের দোকানে পেয়ে যাই। রাসেল সেখানে বসেছিলেন। গ্রেপ্তারের সাথে সাথেই রাসেল আমাদেরকে কেইস ডকেটের বস্তা গায়েবের ঘটনায় জড়িত বলে জানিয়ে দেন। ২৭ ডিসেম্বর ও ২৮ ডিসেম্বর রাসেল যে গেঞ্জি পড়েছিল, গ্রেপ্তারের সময়ও তার গায়ে সেটি ছিল। উক্ত গেঞ্জি পড়া অবস্থাতেই আমরা তাকে আদালতে পাঠাই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন
পরবর্তী নিবন্ধশেয়ার ট্রান্সফার কেলেংকারির প্রমাণ মিলল তদন্তে