এখনও কাজে না ফেরা পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘যেসব পুলিশ সদস্য এখনও কাজে যোগদান করেননি, লুকিয়ে আছেন, তাদের আর যোগদান করতে দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ১৮ সেপ্টেম্বর সকালে গাজীপুরের সফিপুরে বাংলাদেশ আনসার একাডেমিতে আয়োজিত কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান। উপদেষ্টা বলেন, ‘নিশ্চয়ই তারা কোনো অপকর্মে জড়িত, এ কারণে কাজে যোগদান করছেন না। এমন পুলিশ সদস্যের সংখ্যা নগণ্য। তাদের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধান করা হচ্ছে।’ সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন ধরে মাঠে আছে। তাই তাদের একটা ক্ষমতার ভেতরে কাজ করতে হবে। আমাদের অন্যান্য বাহিনীরও কিছু স্বল্পতা রয়েছে। এটা পূরণ করার জন্য সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দরকার। তাই সেনাবাহিনীকে যে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার দেওয়া হয়েছে, এর সুফল ভোগ করবে বাংলার জনগণ।’ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর থানা, ট্রাফিক, বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর সুরক্ষায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশেষ করে আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ডিএমপির থানাগুলোর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন।’
আসলে আইন–শৃঙ্খলা রক্ষা ও জননিরাপত্তা বিধান নিয়ে দেশের জনগণ সংশয়ে আছেন। কেননা স্পষ্টত লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে পুলিশের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন স্থানে সংঘাত–সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ খুবই আতঙ্কে আছেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। পুলিশের অনুপস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থী ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছেন। কিন্তু সেটা তো পরিকল্পিত ও নিয়মমাফিক ছিল না। তারা তাদের মতো করে এইসব কাজ এগিয়ে নিয়ে গেছে। এ অবস্থায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পেশাদার লোকবল নিয়োগের বিকল্প নেই। তবে কেন পুলিশ সদস্যরা কাজের প্রতি উদাসীন, কেন এখনো কিছু সদস্য কাজে যোগদান করছে না– সেইসব বিষয়ে খবরাখবর নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জননিরাপত্তা এখনও পরিপূর্ণভাবে দেশে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে এর পেছনে নানা কারণও বিদ্যমান তা অনেকের অভিমত। আমাদের পাশের দেশ ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো ইতোমধ্যে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা এমনভাবে উপস্থাপন করছে যেন দেশে সামপ্রদায়িক শক্তি মাথা চাড়া দিচ্ছে। ড. ইউনূস আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব হলেও বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি দেশের ভাবমূর্তি রক্ষা করা তার একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলো দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো এবং নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত। এ শঙ্কার প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক বিনিয়োগ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে। এমনকি রাজনৈতিক একটি পক্ষ অর্থনৈতিক অঞ্চলেও ইন্ধন জোগাচ্ছে এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। তাঁরা বলেন, জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে সক্রিয় করা জরুরি। আমরা জানি, বিদায়ী সরকারের সময় পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে পুলিশ বাহিনীর প্রতি জনআস্থা হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু ওই সরকারের পদত্যাগের পর পুলিশ বাহিনীর সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে এবং বাহিনীতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে ইতোমধ্যে। এর মধ্যে স্থানীয় সরকার ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসনিক কাঠামো কার্যকর করা গেলেও মাঠ পর্যায়ে পুলিশকে পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি।
জনগণের ভীতি দূর করে জনগণের সেবা করা পুলিশের দায়িত্ব। পুলিশের প্রতি জনগণের আস্থা ছিল। যে কারণে হোক বর্তমানে পুলিশের ভেতর যে ভয় ঢুকেছে, তা দূর করতে হবে। এই আস্থা অটুট রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাদের ভালো কাজগুলো চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে নিরাপত্তা দেওয়া রাষ্ট্রের দায়িত্ব। জননিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষত পুলিশকে মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। নানা রকমের সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার মনোযোগ দিয়েছে। কিন্তু আমরা বলবো সবার আগে জননিরাপত্তা।