পুরোদমে লবণ উৎপাদন শুরু এখনো খালি অনেক মাঠ

নীতিমালা করায় চাষিদের মনে আশার সঞ্চার

চকরিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেল কয়েক মওসুমের উৎপাদিত উদ্বৃত্ত লবণ এখনো অনেক গুদাম-মাঠেই পড়ে রয়েছে। তার উপর সিন্ডিকেট করে বিদেশ থেকে বার বার লবণ আমদানি করায় দেশে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বার বার বঞ্চিত হয়েছেন দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজার জেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার প্রান্তিক চাষিরা। তবে এবার সরকার জাতীয় লবণ নীতিমালা আইন করায় চাষিদের মনে একটু করে হলেও আশার সঞ্চার হয়েছে। ইতোমধ্যে লবণ উৎপাদনের মওসুমের কিছু সময় পার হয়ে গেছে। এরই মধ্যে লবণ নীতিমালা ঘোষণার পর এবার মাঠে নামতে শুরু করেছেন চাষিরা। তবে অনেক চাষির মাঝে হতাশা ভর করছে, কখন জানি আবার লবণের ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে তারা বঞ্চিত হন।
অবশ্য সবকিছু ছাপিয়ে এখন থেকে আর আশাহত হতে চান না চাষিরা। তারা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন, যাতে লবণের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করা হয়। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন চাষিরা।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি উৎপাদন মওসুমে এখনো খালি পড়ে আছে লবণ উৎপাদনের বিপুল পরিমাণ জমি। মওসুমের শুরুর দিকে কোনো কোনো উপজেলায় লবণ উৎপাদনে চাষিরা মাঠে নামলেও আনুপাতিক হার নগণ্য। তবে ধীরে ধীরে পরিধি বাড়তে শুরু করেছে। দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী অঞ্চল কক্সবাজারের ৬ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বর্তমান চিত্র এটি। চাষি, শ্রমিকসহ প্রায় ১০ লাখ মানুষ এ শিল্পের সাথে জড়িত। তারা লবণ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের যথাযথ পদক্ষেপ আশা করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমান বাজারে আয়োডাইজ মিশ্রিত লবণ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকায়। অথচ সিন্ডিকেটের কারণে কয়েকবছর ধরে মাঠপর্যায়ে এক কেজি লবণের দাম মাত্র ৪ টাকাতে নেমে এসেছিল। এতে সিন্ডিকেটের পকেটে লাভ ঢুকলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন চাষিরা। অথচ মাঠ থেকে এক কেজি লবণ উৎপাদনে খরচ পড়েছিল সাড়ে ৬ টাকা।
২০১৭ সালে ‘বাফার স্টক’ গড়ে তোলার জন্য সরকার জাতীয় লবণনীতি-২০১৬ এর আলোকে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও এতদিন তা কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ ছিল। তাই লবণ চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হচ্ছিল না। তবে চলতি বছর যেহেতু ওই নীতিমালা চূড়ান্ত করে আইনে রূপ দিয়েছে তাতে চাষিদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছে। সরজমিন কক্সবাজারের চকরিয়ার খুটাখালী ও ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭৮২ দ্রোনের বড় লবণমাঠ বহলতলী ঘোনায় গিয়ে দেখা গেছে, ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা থাকায় মওসুম শুরুর পর পরই মাঠে নামেননি চাষিরা। তবে বর্তমানে চাষিরা মাঠে নেমেছেন এবং লবণ উৎপাদনও করছেন।
বহলতলী ঘোনার লবণ চাষিরা বলেন, ‘বিগত কয়েকবছরে ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় খালি পড়ে ছিল লবণ মাঠ। তার উপর সিন্ডিকেট করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি অব্যাহত থাকায় বহলতলী ঘোনার বড় লবণ মাঠে কোনো চাষি মওসুমের শুরুতে নামেনি লবণ উৎপাদনে। দেশীয় শিল্প বাঁচানোসহ চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার বিষয়ে জাতীয় লবণনীতিমালা ঘোষণা করায় মাঠে নেমেছেন চাষিরা।’
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কক্সবাজার লবণ প্রকল্প কার্যালয় সূত্র মতে, চলতি ২০২১-২২ মওসুমে দেশে লবণের চাহিদার বিপরীতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মেট্টিক টন। বিসিকের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সব উপজেলায় লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছেন চাষিরা।
চট্টগ্রাম লবণ চাষি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও লবণ ব্যবসায়ী হারুণুর রশিদ দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সরকার জাতীয় লবণনীতিমালা আইন করায় এবার চাষিদের মাঝে আশার সঞ্চার হয়েছে। দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় আশা করছি এবারের উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিএনপি নেতা সাইফুল কারাগারে
পরবর্তী নিবন্ধইয়াবা যায় স্থলপথে ‘পেমেন্ট’ আকাশপথে