পুরানো সেই দিনের কথা

পিংকি চৌধুরী তুলি | সোমবার , ২ অক্টোবর, ২০২৩ at ৪:৪০ পূর্বাহ্ণ

একদিন ছেলেটাকে বলে অভিযোগের সুরে বলে উঠলাম, ‘বাবাই আজকাল সারাদিন সুযোগ পেলেই টিভিমোবাইল দেখিস তোরা’অভিযোগ শুনে আমার ছেলে হেসে বলে উঠলো ‘তাহলে অবসর সময়ে কী করতে তোমরা?’ ওর প্রশ্ন একটু ভাবায় আমাকে। এর জন্য ওরা তো দায়ী নয়, দায়ী আমরা আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা। আসলে আজকালকার বাচ্চাগুলো বস্তা ভর্তি বইয়ের চাপে পিষ্ট। ওরা আমাদের সময়ের ছেলেবেলায় কী করতাম আমরা তা কল্পনাও করতে পারে না। ওকে বললাম ‘শোন তাহলে সেইসময়কার ছোটবেলা বনাম এখনকার ছোটবেলার পার্থক্য। চোখদুটো ছানাবড়া করে শুনতে লাগলো ওআমি তখন তোর মত সাতআট বছর বয়সি। আমাদের সময় শহরে এত দালানকোঠা ছিলো না। আমাদের হাজারীলেইনের ভিতরে বাগানবাড়িতে মাঠে বিকাল হলেই পূজনদাদা, তমা দিদি, মিঠুনদাদা, সোমা, প্রিয়া আমি সবাই জড়ো হতাম। হাডুডু, বৌচি, কাঠালগাছ, কানামাছি, ইঁদুরদৌড়, ব্যাডমিন্টন, কত খেলা খেলতাম। চারপাশে ঘরঘেরা মাঠ, সব মামাসিরা চিরুনী হাতে চুলআচড়াতে বসে আমাদের কাণ্ড দেখতেন। বিকাল বেলা আমাদের হাসাহাসির মুখরিত শব্দে পুরো বাগানবাড়ি আনন্দে ভাসতো। আর আজকাল চারপাশে এত আকাশছোঁয়া দালানকোঠা যে আকাশটায় না কোনদিন ঢাকাপড়ে যায়, ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধ করলেই কারো মুখ আর কেউ দেখে না। আর সন্ধ্যা হতেই সবাই পড়তে বসে যেতাম। কার চেয়ে কে কত বড় করে পড়বে সেই চর্চায় সবাই ব্যস্ত। আর আজকাল তোরা কী সব ছাইপাঁশ ককশিট কাটা, কাগজকাটা(এসাইনমেন্ট) নিয়ে ব্যস্ত থাকিস। জানি না আজকাল লেখাপড়ার এই ধরনের কাঠামোগত পরিবর্তন করে কতটুকু ফলপ্রসূ হবে। আমরা বড় হয়েছি একান্নবর্তী পরিবারে বাবাজ্যাঠা, বড়দাদা, আমরা ছোট ভাইবোন সবাই একসাথে বসে গল্প করতে করতে ভাত খাওয়ার যে কী আনন্দ সেটা বোঝানো যাবে না। তোরা ভাত খাস যাদুর বক্সে কার্টুন দেখতে দেখতে। পরিবারের সবাই সুযোগ পেলেই গল্পআড্ডায় মেতে উঠতাম। জেঠিমা বলতো তোদের ভাইবোনদের শুধু কথা আর কথা। পুজোপার্বণে, বনভোজনভ্রমণের পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঘুরাঘুরির যে কী আনন্দ ছিলো বোঝানো যাবে না। পুজো আসলে গুনতে বসতাম কার কটা জামা হলোআজকাল তোর ছোটবেলা যত দেখি ততই বড্ড মনে পড়ে যায় ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়…. ’

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅক্ষয়চন্দ্র সরকার : সাহিত্য সমালোচক
পরবর্তী নিবন্ধবাঁশখালীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় চাই