পুরস্কার প্রাপ্তি লেখককে লেখালেখিতে উৎসাহিত করে

গৌতম কানুনগো | মঙ্গলবার , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

বিজ্ঞান সাহিত্য এবং গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের জন্য এ বছর চট্টগ্রাম একাডেমি প্রবর্তিত শিল্পশৈলী পুরস্কার পেয়েছেন অধ্যাপক তপন চক্রবর্ত্তী। উল্লেখ্য ২০২২ সালে প্রথমবার শিল্পশৈলী পুরস্কার পান প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. সুনীতিভূষণ কানুনগো। ২০২৩ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণার জন্য ডা. মাহফুজুর রহমান এবং ২০২৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব ও ভাষা বিজ্ঞান বিষয়ে পেয়েছেন ড. মোঃ আবুল কাসেম।

নিভৃতচারী নিমগ্ন এক বিজ্ঞান সাধক অধ্যাপক তপন চক্রবর্ত্তী। তিনি ১৯৪২ সালের ২০ জানুয়ারী চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার সুখছড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কারসহ আরো অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। গত ১০শে ডিসেম্বর চট্টগ্রাম একাডেমির ফয়েজ নুরনাহার মিলনায়তনে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব অধ্যাপক রীতা দত্তের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. ওবায়দুল করিম। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য দেন শিল্পশৈলী সম্পাদক প্রাবন্ধিক নেছার আহমদ। অধ্যাপক তপন চক্রবর্ত্তীর জীবনী পাঠ করেন অনুবাদক ফারজানা রহমান শিমু। একে একে বক্তব্য দেন গল্পকার বিপুল বড়ুয়া, . সেলিম জাহাঙ্গীর, নাট্যজন সনজীব বড়ুয়া, কথাসাহিত্যিক বিচিত্রা সেন এবং সৃজনশীল প্রকাশনা পরিষদের সভাপতি সাহাবউদ্দীন হাসান বাবু। তাঁরা প্রত্যেকেই সম্মাননা প্রাপ্ত গুণীজনকে অভিনন্দন জানান। সভাপতি, প্রধান অতিথিসহ মঞ্চে উপবিষ্ট সকলে শিল্পশৈলীর প্রচ্ছদ উন্মোচন করেন। বক্তারা বলেন, অধ্যাপক তপন চক্রবর্ত্তী চট্টগ্রামের গর্ব, চট্টগ্রামের অহংকার। চট্টগ্রাম একাডেমি তাঁকে শিল্পশৈলী পুরস্কার দিতে পেরে আমরা নিজেরাই সম্মানিত হয়েছি। প্রধান অতিথি, সভাপতি এবং মঞ্চে উপবিষ্ট গুণীজনেরা পুরস্কারপ্রাপ্ত অতিথির হাতে সম্মাননা স্মারক সনদপত্র এবং নগদ সম্মানী তুলে দেন। এ সময় করতালির মাধ্যমে মিলনায়তনে উপস্থিত সাহিত্যপ্রেমীরা তাঁকে অভিনন্দন জানান। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে অধ্যাপক তপন চক্রবর্ত্তী আবেগআপ্লুত কন্ঠে চট্টগ্রাম একাডেমির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান এবং মিলনায়তনে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, সাহিত্যের কোন সীমারেখা বা লক্ষণরেখা থাকতে পারে না। লেখক হবার আগে পাঠক হতে হবে, সাহিত্যের মধ্যেও বিজ্ঞান আছে। তিনি মাস্টারদা সূর্যসেন, কবিয়াল রমেশ শীল এবং মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর কথা উল্লেখ করেন। চট্টগ্রাম একাডেমি চট্টগ্রামকে সাংস্কৃতিক শহরে পরিণত করার ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে এই সম্মান পেয়ে বেশী ভালো লাগছে।

. ওবায়দুল করিম বলেন বিজ্ঞান ছাড়া কোন সাহিত্য রচিত হয় না। বিজ্ঞান আমাদের সাহিত্যের মূল বিষয়। কলম না থাকলে কবিতা লেখা হয় না, কবি যেমন কল্পনা ছাড়া কবিতা লিখতে পারেন না ঠিক তেমনি বিজ্ঞানী কল্পনা ছাড়া কোন জিনিস আবিষ্কার করতে পারেন না। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক রীতা দত্ত বলেন তাঁর লেখার মধ্যে গতি এবং যতি দুটোর মেলবন্ধন রয়েছে। তিনি জ্ঞানযোগী এবং কর্মযোগীও বটে। মানুষের জন্য বিজ্ঞান এবং সাহিত্যের জন্যও বিজ্ঞান। প্রকৃতপক্ষে আমাদের জীবনে সাহিত্য ও বিজ্ঞান উভয়ের প্রয়োজন রয়েছে। পরিশেষে “চলে এসো ঘরে পরবাসী”রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশনার মাধ্যমে তিনি তাঁর বক্তৃতার ইতি টানেন। কবি রাশেদ রউফ মিলনায়তনে উপস্থিত সাহিত্য প্রেমীদের সাথে তাঁকে (অধ্যাপক তপন চক্রবর্ত্তী) পরিচয় করিয়ে দেন। পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে নেছার আহমদ সম্পাদিত শিল্পশৈলীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। বর্ণিল অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য চট্টগ্রাম একাডেমিকে জানাই ধন্যবাদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকিশোর গ্যাং ও সামাজিক অস্থিরতা রোধ করা হোক
পরবর্তী নিবন্ধধর্ম হয় ক্ষমাতে