এ বছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন ১৫ জন লেখক, গবেষক ও সাহিত্যিক। এর মধ্যে কথাসাহিত্যে মনোনীত বিশ্বজিৎ চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। এছাড়া কবিতায় মনোনীত দুই কবি আসাদ মান্নান ও বিমল গুহ চট্টগ্রামের বাসিন্দা। আসাদ মান্নানের বাড়ি সন্দ্বীপে। বিমল গুহের বাড়ি সাতকানিয়ার বাজালিয়া গ্রামে। দৈনিক আজাদীর কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা বলেছেন, পুরস্কার বা স্বীকৃতি তাদের লেখালেখির প্রতি দায়িত্ববোধ আরো বাড়িয়ে দেবে।
বিশ্বজিৎ চৌধুরী
বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, পুরস্কার স্বীকৃতি দেয়। আর স্বীকৃতি সবসময় আনন্দের। পাশাপাশি দীর্ঘদিন লিখে যেতে হবে সে দায়িত্ব বাড়ায়। তবে পুরস্কারই সব না। ভালো লিখে যাওয়াটাই আসল কথা। পুরস্কার ক্ষণস্থায়ী। পাঠকের ভালোবাসাটাই দীর্ঘস্থায়ী। তাই চেষ্টা থাকবে দীর্ঘদিন যেন ভালো লিখতে পারি।
তিনি বলেন, আমার প্রথম বই বের হয়েছিল ১৯৮২ সালে। বইয়ের নাম ছিল ‘লিন্ডা জনসনের রাজহাঁস’। বইটা ‘সিকান্দর আবু জাফর সাহিত্য পুরস্কারে’র জন্য নির্বাচিত হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে মঞ্চে উঠে বিচারকমণ্ডলীর সভাপতি সৈয়দ আলী আহসান বললেন, ‘বইটা মৌলিক নাকি অনুবাদ গ্রন্থ তা বুঝতে না পারায় এটাকে পুরস্কৃত করতে পারলাম না।’ এতে আমি খুব বিস্মিত হয়েছিলাম। কেননা, একটি বইয়ের নাম দেখেই সেটাকে অনুবাদগ্রন্থ মনে করার কোনো কারণ তো নেই। তাছাড়া সৈয়দ আলী আহসানের মতো পণ্ডিত ব্যক্তি অনুবাদ আর মৌলিক গ্রন্থের পার্থক্য বুঝবেন না এটা হতেই পারে না। প্রথম বই নিয়ে ঘটে যাওয়া এ বিভ্রান্তিকর ঘটনা থেকে পুরস্কার নিয়ে মর্মাহত হয়েছিলাম। একটু দুঃখ ছিল। এতদিন পর এসে পুরস্কার পেলাম, বড় পুরস্কার যাকে বলে। তা অবশ্যই আনন্দের।
প্রথম লেখালেখি কখন শুরু করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, অধুনালুপ্ত ‘বাংলার মুখ’ নামে একটি পত্রিকায় ছড়া লিখেছিলাম। সেটাই ছিল প্রথম লেখা।
কবি হিসেবেই পরিচিত বেশি। কিন্তু পুরস্কার পেলেন কথাসাহিত্যে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বজিৎ চৌধুরী বলেন, ২০১৪ সালে আমার ‘নার্গিস’ উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার পর পাঠকের কাছ থেকে খুব সাড়া পেয়েছিলাম। এরপর আমার মনে হলো, গদ্যে আমার ফোকাসড হওয়া দরকার। মানে একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা দরকার। আমি কবিতা লিখব কিন্তু গদ্যে ফোকাসড থাকবে। পরবর্তীতে গদ্যে মনোযোগ দেওয়ায় আমার প্রতি কাব্যদেবী বোধ হয় একটু অভিমান করে সরে গেছে। তাই কবি হিসেবে আমাকে অভিধা করা কতটা যুক্তিসঙ্গত সেটা নিয়েও আমি ভাবি।
বিমল গুহ
কবি বিমল গুহ দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমাদের বিবেচনায় বাংলা একাডেমি পুরস্কার সরকারি পর্যায়ে সাহিত্যের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার। এটা সাহিত্যের স্বীকৃতি। এর মাধ্যমে একজন লেখককে সম্মান জানানো হয়। যদিও এটা ঠিক, কোনো লেখক পুরস্কারের জন্য লিখে না। তবে লেখককে সম্মান জানালে বা সম্মান পেলে লেখকের দায়িত্ববোধ আরো বেড়ে যায়। তিনি তার কাজে আরো বেশি উৎসাহ বোধ করেন।
তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেরিতে পেলেও আমি আনন্দিত হয়েছি। এটার আমার জন্য এবং আমার পরিবারের জন্য আনন্দের। আমি মনে করি, এতদিন পর্যন্ত যে কাজ করেছি তার একটা স্বীকৃতি সরকারিভাবে পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, এবার আমাকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করায় বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ জানাই।
আসাদ মান্নান
কবি আসাদ মান্নান দৈনিক আজাদীকে বলেন, যে কোনো স্বীকৃতি আনন্দের এবং প্রত্যাশিত। দীর্ঘ ৪৫ বছর লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত আছি। আমার এ স্বীকৃতি আমার চেয়েও আমার বন্ধু ও যারা দীর্ঘদিনের পাঠক তারা প্রত্যশা করেছে। তাদের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে–সেটাই আমার জন্য আনন্দের।
তিনি বলেন, লেখকের তৃপ্তি বলে কিছু নাই। লেখালেখি–জীবনের শুরুতেই স্বীকৃতি পেয়েছিলাম। গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার দিয়ে আমার লেখালেখি শুরু।
আসাদ মান্নান বলেন, আমার লেখালেখিতে আসার পেছনে যে বিষয়টি কাজ করেছে সেটা হচ্ছে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মর্মান্তিক তিরোধান। সেখান থেকে প্রতিবাদী কবিতা লিখতে লিখতে এতদূর আসা। আমার যা কিছু অর্জন ও প্রাপ্তি সবকিছু বঙ্গবন্ধুর জন্য এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলে সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামে বড় হয়েছি এবং চট্টগ্রামের মাটি আমাকে তৈরি করেছে। বিশেষ করে লেখালেখি জীবনের বন্ধু এবং যারা নিবিড়ভাবে আমার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তারাই আমাকে তৈরি করেছে। তাই এ সম্মান চট্টগ্রামের।