মার্কিন দূতাবাসের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের সামনে অজ্ঞাতনামা দুই যুবক ব্যাগ ফেলে গেছেন। তাঁদের গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল। দূতাবাসের নিরাপত্তারক্ষী জাকির হোসেন মোল্লা নিজেই দেখেছেন। এমন বিবরণে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয় ২ ডিসেম্বর। পুলিশের একাধিক ইউনিট ঘটনাস্থলে হাজির হলেও ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)। দিন পনেরো আগে ওই ব্যাগের মালিককে খুঁজে পেয়েছে সিটিটিসি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিটিটিসির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেছেন, ব্যাগটি ওখানে রেখেছিলেন নিরাপত্তারক্ষী জাকির হোসেন মোল্লা নিজেই। কর্মদক্ষতা দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেবেন এবং কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পুরস্কার নেবেন, এই লোভ থেকেই এমন কাণ্ড ঘটান তিনি। এর আগে ২০১৫ সালে তিনি ‘গার্ড অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেয়েছিলেন। ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশ তাঁকে আদালতে উপস্থাপন করেছে। জাকির এখন কারাগারে।
তবে সিটিটিসির উপকমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম এ ব্যাপারে বিস্তারিত কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি। শুধু বলেছেন, এই ঘটনায় অগ্রগতি আছে। রাজধানীর ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মোক্তারুজ্জামান ২ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল ঘুরে এসে একটি প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, একটা কিছু ঘটেছে জানতে পেরে ২ ডিসেম্বর বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে আমেরিকান অ্যানেঙ বিল্ডিংয়ের (আমেরিকান গ্যারেজ) সামনে গিয়েছিলেন। নিরাপত্তারক্ষী জাকির হোসেন মোল্লা তাঁকে বলেন, অ্যানেঙ বিল্ডিংয়ের উত্তর-পশ্চিম কোনায় সেন্ট্রি পোস্টের কাছে ২৪-২৫ বছর বয়সী দুজন অজ্ঞাতনামা যুবক রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তখন তিনি (জাকির) তাঁদের জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনারা দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’ জবাবে যুবকেরা বলেন, ‘দাঁড়িয়ে থাকলে কী হবে?’ জাকির এরপর পুলিশকে বলেন, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সন্দেহভাজন যুবকদের একজন তাঁদের ঘাড়ে থাকা কাপড়ের ব্যাগ ফিডার রোডে ফেলে দ্রুত ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যান। ব্যাগের ভেতর সন্দেহজনক কিছু থাকতে পারে ভেবে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান। সঙ্গে সঙ্গে গুলশান বিভাগের উপকমিশনার, কূটনৈতিক বিভাগের উপকমিশনার, অতিরিক্ত উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার, গোয়েন্দা বিভাগ (গুলশান) উপকমিশনার, গুলশানের অতিরিক্ত উপকমিশনার, বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অতিরিক্ত উপকমিশনার ঘটনাস্থলে হাজির হন। এ সময় অ্যানেঙ ভবনের কর্মকর্তা সহকারী রিজিওনাল সিকিউরিটি অফিসার আলেঙান্ডার, জ্যেষ্ঠ তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দ নাবিল মাহমুদও ছিলেন। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ব্যাগটি প্রথমে এঙুরে করে। এঙ-রেতে কিছু স্পষ্ট না হওয়ায় বোমা নিস্ক্রিয়করণ দল দূরে গিয়ে ব্যাগটি নিষ্ক্রিয় করে। এরপর ব্যাগ থেকে ম্যাচবাঙ, তার, একটি ছোট ছুরি, বালুভর্তি কৌটা উদ্ধার হয়। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল সব জিনিস নিয়ে ফিরে যায়।
ঘটনার পর পুলিশ দূতাবাসে স্থাপিত ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে। ফুটেজে শুধু ব্যাগটি ছুড়ে ফেলা হচ্ছে এমন একটি ছবিই দেখা যাচ্ছিল বারবার। এরপর তারা দেখতে পায় ব্যাগটি আসছে নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষের দিক থেকে। একটি ফুটেজে নিরাপত্তারক্ষীকে জানালা খুলে পর্দা সরাতে দেখে তারা। তারপর সেখান থেকে ব্যাগটি ছুড়ে ফেলতে দেখে। ওই সময় সেখানে দায়িত্ব পালন করছিলেন জাকির। জিজ্ঞাসাবাদে জাকির তাঁর সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেন। জাকির পুলিশকে বলেন, পুরস্কারের আশায় এই ফন্দি এঁটেছিলেন তিনি।