চট্টগ্রাম ওয়াসার দৈনিক পানি উৎপাদনের ক্ষমতা এখন প্রায় ৫০ কোটি লিটার। আগামী এক–দুই মাসের মধ্যে বোয়ালখালী উপজেলার জ্যৈষ্ঠপুরা এলাকায় ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প থেকে আরো ৬ কোটি লিটার উৎপাদন শুরু হবে। তখন চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে দৈনিক ৫৬ কোটি লিটারে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার হিসেব অনুযায়ী, বর্তমানে তাদের পানি উৎপাদনের পরিমাণ ৫০ কোটি লিটার এবং নগরীতে পানির চাহিদাও ৫০ কোটি লিটার। উৎপাদন এবং চাহিদা সমান–সমান হলেও নগরীর অনেক এলাকার মানুষ ওয়াসার সুপেয় পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পুরনো পাইপ লাইনে কারণে। পুরনো পাইপ লাইনের কারণে অনেক এলাকায় পাইপ লিকেজ হয়ে রাস্তা এবং নালায় পানি অপচয় হচ্ছে। গ্রাহকরা ঠিকমতো পানি পাচ্ছেন না। আবার অনেক এলাকায় পুরনো পাইপ লাইনের কারণে পানির প্রেসার ঠিকমতো যাচ্ছে না। পানির প্রেসার দেয়া হলে পুরনো পাইপ ফেটে রাস্তা ও নালা ভেসে যাচ্ছে। এই কারণে কিছু কিছু এলাকার গ্রাহকরা পানির দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াসার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নগর জুড়ে ওয়াসার পুরনো পাইপ লাইন পরিবর্তনসহ চট্টগ্রাম ওয়াসা অটোমেশনের আওতায় আসলে সুফল পাবে চট্টগ্রামবাসী।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প–২ এর অধীনে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ছাড়াও ৩১৭ কিলোমিটার ট্রান্সমিশন লাইন এবং শহরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ৫৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৭০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর অনেক এলাকায় পুরনো পাইপ লাইন পরিবর্তন করে নতুন পাইপ বসানো হয়েছে।
৩০০ কিমি পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে নতুন প্রকল্প : চট্টগ্রাম শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে ৩০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপনে নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ। প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে প্রকল্পের অধীনে পাইপলাইন প্রতিস্থাপনের পাশাপাশি ৪০ হাজার গ্রাহককে স্মার্ট মিটারের আওতায় আনা হবে। প্রকল্পটির বছরব্যাপী সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে ফ্রান্সভিত্তিক পরামর্শক সংস্থা সুয়েজ। ২৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বাকি ৫০ মিলিয়ন ডলার সরকার বহন করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শহরের দূরবর্তী গ্রাহকদের পানি না পাওয়ার দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকৌশলী বলেন, নতুন এই প্রকল্পের ডিপিপি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণচুক্তি হবে। এসব প্রক্রিয়া ২০২৪ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি।
জানা গেছে, পুরাতন পাইপলাইনের মধ্যে যেগুলো ভালো আছে, সেগুলো রাখা হবে। বাকিগুলো পরিবর্তন করা হবে। ওয়াসার নথিপত্রের তথ্যমতে, বর্তমানে নগরীর ১৬৮ দশমিক ২১ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্রায় ১৩০০ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্ক আছে সংস্থাটির। এরমধ্যে কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প–১ এর অধীনে ৪৫ কিলোমিটার, চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্পের অধীনে ১৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন নেটওয়ার্ক প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
এছাড়া কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প–২ এর অধীনে শহরের মধ্যবর্তী স্থান থেকে ৫৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৭০০ কিলোমিটার পাইপলাইন প্রতিস্থাপন হয়েছে। এর বাইরে নগরীর পতেঙ্গা, কাট্টলী, জাকির হোসেন সড়ক, দক্ষিণ খুলশী, ফয়’স লেক, আকবর শাহ ও হাটহাজারীর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রায় ৪০০ কিলোমিটার পুরাতন পাইপলাইন দিয়ে চলছে।
নগরীতে এখানো যেসব এলাকায় পুরনো পাইপ লাইন রয়েছে সেসব এলাকার মানুষের অভিযোগ, তারা প্রতি সপ্তাহে ঠিকমতো পানি পান না। নগরীর লাভ লেইন এলাকার ৫ নম্বর হোল্ডিংসের মালিক জানান, তার বিল্ডিংসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন ওয়াসার পানি পাওয়া যায় না। সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন পানি পাওয়া যায় মাত্র।
একই অভিযোগ ঝাউতলা এলাকায়ও। এমন অভিযোগ রয়েছে হালিশহর, ঈদগাঁও এবং রমনা আবাসিক এলাকাসহ আরো অনেক এলাকার মানুষের। এদিকে নগরীর শহীদ মির্জা লেইনে বছরের পর বছর পানি পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ এই এলাকার বাসিন্দাদের।
২০২০ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসার এক তদন্তে উঠে আসে, লিকেজ সমস্যার কারণে উৎপাদিত পানির বড় একটি অংশ অপচয় হয়। বর্তমানে নগরীর ৭০ থেকে ৮০ ভাগ এলাকায় পানি সরবরাহ করতে পারে সংস্থাটি। পানির অপচয় রোধ করা গেলে নগরীর ৯০ থেকে ১০০ ভাগ এলাকায় পানি সরবরাহ করা সক্ষম হবে বলে মত দিয়েছেন ওয়াসার সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।