দীর্ঘ ১৬ মাস কমিটিহীন থাকার পর পুরনো নেতৃত্ব বহাল রেখে ঘোষণা করা হয়েছে চট্টগ্রাম নগর মহিলা দলের কমিটি। মনোয়ারা বেগম মনিকে সভাপতি এবং জেলী চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩৬ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কার্যকরী এ কমিটি গতকাল বৃহস্পতিবার ঘোষণা করে কেন্দ্র। নবগঠিত কমিটির এ শীর্ষ দুই নেত্রী এর আগে দুই দফা নগর মহিলা দলের একই পদে ছিলেন। অর্থাৎ পুরনো নেতৃত্বই বহাল রয়েছে।
এদিকে নতুন নেতৃত্ব না আসায় গতকাল ঘোষিত কমিটি প্রত্যাখ্যান করেছে অন্যান্য পদ পাওয়া এবং সংগঠনটির পূর্বের কমিটির ১৩ জন নেত্রী। গত রাতে জরুরি বৈঠক করে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তাদের দাবি, ঘোষিত কমিটি একটি ‘মনোরঞ্জন ও সিন্ডিকেটের বাণিজ্যিক কমিটি’। ওই ১৩ নেত্রীর স্বাক্ষর করা পদত্যাগ পত্রে বলা হয়, মহিলা দল চট্টগ্রাম মহানগরের ১৩৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি প্রকাশের বিষয়ে দলের সিনিয়র সদস্য ও কর্মীরা অবগত ছিলেন না। নবগঠিত হলেও এটা পুরনো কমিটি যা তৃতীয়বার প্রকাশ হয়েছে। মনোয়ারা বেগম মনি ও জেলী চৌধুরী তৃতীয় বার সভাপতি ও সাধারণ হিসেবে পদাসীন হওয়া দুঃখজনক।
পদত্যাগপত্রে লেখা হয়, একটি পুরনো গণতান্ত্রিক দলে গঠনতন্ত্র বহির্ভূত সিন্ডিকেট ও বাণিজ্যিক কমিটি আমরা মানি না। নতুন নতুন নেতৃত্ব আশা করছি দেশ ও দলের স্বার্থে। তিন যুগের মত রাজনীতি করে মামলা, হামলা, জেল জুলুম খেটে আমরা কী প্রতিদান পেলাম? আমরা সকলে একযোগে পদত্যাগ করে মনোয়ারা বেগম মনি ও জেলী চৌধুরীর ১৩৬ সদস্য বিশিষ্ট্য কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করলাম।
পদত্যাগ করা ১৩ নেত্রী হচ্ছন– জেসমিনা খানম, শাহিদা খানম, আঁখি সুলতানা, দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটা, গুলজার বেগম, রেজিয়া বেগম বুলু, আর্জুননাহার মান্না, রোখসানা বেগম, ফাতেমা কাজল, নাছিমা আলম, কামরুন নাহার লিজা, সায়েরা বেগম ও নার্গিস বেগম।
নবগঠিত কমিটির সহ–সভাপতি ও চসিকের সাবেক কাউন্সিলর জেসমিনা খানম দৈনিক আজাদীকে বলেন, পুরাতন কমিটি আমরা চাই না। নতুন মুখ চাই। পুরনো নেতৃত্ব অর্থাৎ মনি–জেলীকে বহাল রেখে গঠিত সিন্ডিকেট কমিটি আমরা চাই না।
নবগঠিত কমিটির সহ–সভাপতি ও সাবেক ছাত্রদল নেত্রী আঁখি সুলতানা দৈনিক আজাদীকে বলেন, এখানে সিন্ডিকেট বাণিজ্য হয়েছে। আমরা মহিলা দল করি তাই আমাদের নেত্রী কে হবেন তা আমাদেরই ঠিক করার কথা ছিল। অথচ আমরা কেউ জানি না কীভাবে এ কমিটি হয়েছে। এ প্রতিবন্ধী কমিটি আমরা চাই না।
নবগঠিত কমিটির ৩ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক দেওয়ান মাহমুদা আক্তার লিটা আজাদীকে বলেন, ঘোষিত কমিটিতে আমাকে ৩নং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনীত করেছে যা অবমূল্যায়নের শামিল। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি উক্ত পদ গ্রহণ না করে দলের একজন সাধারণ কর্মী থেকে পূর্বের মতো সকল কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করব। তাই পদত্যাগ করেছি।
জানা গেছে, গতকালের আগে ২০১৭ সালের ২২ মে নগর মহিলা দলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। ওই কমিটিতেও মনোয়ারা বেগম মনি সভাপতি ও জেলী চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর তাদের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেছিল কেন্দ্র। এরপর ২০২২ সালের ১০ মার্চ মহানগর মহিলা দলের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গতকাল নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ব্যানারে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছিরের প্রশংসা করে বক্তব্য দেয়ায় ২০১৯ সালের ৫ অক্টোবর বহিষ্কার করা হয়েছিল মনোয়ারা বেগম মনিকে। যা ২০২০ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রত্যাহার করা হয়। গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি‘র সমর্থন নিয়ে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচনও করেছিলেন।
মনোয়ারা বেগম মনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজপথের ত্যাগী এবং সক্রিয় নেত্রীদের নিয়ে একটি ভালো কমিটি হয়েছে। চলমান দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই–সংগ্রামে আমরা অতীতের মতোই সক্রিয় থাকব। কেন্দ্র থেকে অনেক যাচাই–বাছাই করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। যারা মনে করছেন কাঙ্ক্ষিত পদ পাননি, সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়। একটি বড় রাজনৈতিক সংগঠনে নানা মত থাকতেই পারে।
এ বিষয়ে জানার জন্য একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরী।












