বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে পুদোভকিন খ্যাতিমান পরিচালক, অভিনেতা ও চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সুপরিচিত। রুশ চলচ্চিত্রের অন্যতম পুরোধা।
পুদোভকিনের পুরো নাম ভ্সেভালো ইলরিওদোভিচ পুদোভকিন। জন্ম ১৮৯৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার পেনজায়। ১৯১৪ সালে মস্কো রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকৃতি বিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি নেন তিনি। এ সময় প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে তাঁকে চলে যেতে হয় সমরক্ষেত্রে। পরের বছর যুদ্ধে আহত ও বন্দি হয়ে তিন বছর তিনি বন্দি শিবিরে কাটান।
সেখানে পুদোভকিন আয়ত্ত করেন ইংরেজি, জার্মানি ও পোলিশ ভাষা। ১৯১৮ সালে বন্দি শিবির থেকে পালিয়ে চলে আসেন মস্কোয়, যোগ দেন একটি কারখানায় রসায়নবিদ হিসেবে। তাঁর অবসর কাটতো ছবি এঁকে। ছাত্র জীবন থেকেই থিয়েটার আর সঙ্গীতের প্রতি প্রবল অনুরাগী পুদোভকিন ১৯২০ সালে ভর্তি হন নব প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রীয় চলচ্চিত্র বিদ্যালয়ে, যা পরবর্তীসময়ে সিনেমাটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে থাকা অবস্থায় পুদোভকিন চলচ্চিত্রে অভিনয়, চিত্রনাট্য রচনা ও চলচ্চিত্র পরিচালনা শুরু করেন। প্রথম দিকে পুদোভকিন নির্মিত ছবিগুলো ছিল নির্বাক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য: কমেডি ছবি ‘দাবাজ্বর’, ‘মস্তিষ্কের কারিগরি’, ‘মা’ (ম্যাক্সিম গোর্কির কালজয়ী উপন্যাস অবলম্বনে), ‘সেন্ট পিতারবুর্গের সমাপ্তি’, ‘চেঙ্গিসখানের উত্তরাধিকারী’ ইত্যাদি। তাঁর প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘পলাতক’। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি নির্মাণ করেন ‘ঝিরামুখায় ভোজসভা’ এবং ‘পিতৃভূমির নামে’ ছবি দুটি। পুদোভকিনের বেশ কিছু চলচ্চিত্র রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছে। চলচ্চিত্র বিষয়ে তাঁর বহু রচনা অনূদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। পুদোভকিন চলচ্চিত্রে এসেছিলেন জীবন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান, বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা আর শিল্পীর প্রয়োজনীয় গুণাবলী নিয়ে। পাশাপাশি তাঁর ছিল অসাধারণ প্রাণশক্তি এবং শ্রমসাধ্য কাজের সামর্থ। বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এই মহান শিল্পীর অবদান অবিস্মরণীয়। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুন রাশিয়ার রিগোতে তাঁর মৃত্যু হয়।