পুতুল কানাডার নাগরিক ছিলেন, ডব্লিউএইচওতে থাকা দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর : দুদক

| সোমবার , ২৭ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ‘কানাডার নাগরিকত্ব’ ছিল, এমন তথ্য পাওয়ার কথা বলেছে দুর্নীতি দমন কমিশনদুদক। পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ‘বিশ্বাসযোগ্য’ অভিযোগ থাকায় বাংলাদেশের হয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় (ডব্লিউএইচও) তার দায়িত্ব পালন করা দেশের জন্য ‘মর্যাদাহানিকর’ বলেও মনে করছে সংস্থাটি। বর্তমানে ডব্লিউএইচওতে আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে কর্মরত পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার পর কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেই তথ্য তুলে ধরে রোববার দুদকের দেওয়া তথ্য বিবরণীতে এসব কথা বলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

দুদক বলেছে, অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে পুতুলকে ডব্লিউএইচও এর দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে ‘রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এবং নিয়মবহির্ভূত কার্যকলাপের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে’।

বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করার কথা তুলে ধরে সংস্থাটি বলেছে, ‘যুক্তিযুক্ত কোনো কারণ ছাড়াই পুতুলকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সফরে সফরসঙ্গী করা হয়েছে। তাছাড়া তার ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা হিসেবে প্রদত্ত তথ্যাদি যথাযথ ছিল না। ওই মনোনয়নকালে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) তিনি কানাডার পাসপোর্টধারী তথা কানাডার নাগরিক ছিলেন মর্মেও তথ্য পাওয়া গেছে।’ ছাত্রজনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারত চলে যান। সেই থেকে তিনি সেখানেই আছেন। আর ডব্লিউএইচওতে পুতুলের কর্মস্থল নয়াদিল্লি।

সরকার পতনের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। তার মেয়ে পুতুলের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা হয়েছে, যার মধ্যে ‘তথ্য গোপন ও ক্ষমতার অপব্যবহার’ করে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে দুদক একটি মামলা দায়ের করেছে।

দুদক বলেছে, ডব্লিউএইচও এর ৭৬তম সম্মেলন উপলক্ষে ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ‘রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় করে’ শতাধিক কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি দল দিল্লিতে উপস্থিত হয়। পুতুল নিজের ‘পারিবারিক প্রভাব’ এবং তার নিকটাত্মীয়দের ‘ক্ষমতার অপব্যবহার করে’ সরকারের বিপুল অর্থ ক্ষতি করেছেন বলে তুলে ধরেছে কমিশন। অনুসন্ধানের বরাতে দুদক বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ‘দুর্নীতির’ আশ্রয় নিয়ে এবং তার পারিবারিক ‘রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহারের’ মাধ্যমে বেআইনিভাবে ঢাকার পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পের কূটনৈতিক জোনে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। সে কারণে তার ও অন্যদের বিরুদ্ধে এরইমধ্যে দুদক একটি মামলা করেছে। এছাড়া পুতুল ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে ‘জোর করে উপঢৌকন আদায় ও অর্থ আত্মসাৎ’ করেছেন, তথ্য বিবরণীতে বলেছে দুদক।

সংস্থাটি বলেছে, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ‘ভুয়া প্রকল্প’ দেখিয়ে পুতুল রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। দুদকের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে দেখা যায় যে, পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে। এহেন ব্যক্তি বাংলাদেশ কর্তৃক মনোনীত হয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি সম্মানজনক পদে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া দেশের জন্য মর্যাদাহানিকর। এর ফলে বিশ্বমণ্ডলে দেশের সুনাম ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জোরালো আশংকা রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের দপ্তর ভারতের দিল্লিতে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে পুতুল সেখানেই আছেন। গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে শেখ হাসিনাও আছেন দিল্লিতে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রাথমিকের শিক্ষক পদটার গুরুত্ব অনেক বেশি, অর্থমূল্যে এর বিবেচনা হবে না
পরবর্তী নিবন্ধএবার এমপি পদ থেকে টিউলিপের পদত্যাগ দাবি