পুণ্যময় জীবন গড়ার প্রেরণা জোগায় রোজা

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | সোমবার , ১০ মার্চ, ২০২৫ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

মানবজীবনে পরিশুদ্ধি আনতে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার বিধান দিয়েছেন মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন। সারা বছর নানা অপরাধে জড়ানোর যে প্রবণতা, রোজার মাসে তা থেকে বেরিয়ে এসে নৈতিক পরিশুদ্ধ জীবনই গড়ে তুলেন একজন নিবিষ্ট রোজাদার। রোজা নৈতিক উৎকর্ষতা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির বাস্তব সোপান। রোজা এমন একটি ফরজ ইবাদত, যা একেবারেই লৌকিকতামুক্ত। অন্য ফরজ ইবাদত তথা নামাজ, হজ ও যাকাত প্রদানের ক্ষেত্রে লৌকিকতার অবকাশ থাকতে পারে। রিয়া লৌকিকতা বা প্রদর্শনেচ্ছা থেকে উক্ত তিনটি ফরজ ইবাদত মুক্ত নাও হতে পারে। কিন্তু ব্যতিক্রম একমাত্র সিয়াম সাধনা বা রোজা। কেবল আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর নির্দেশ প্রতিপালন করতে গিয়ে রোজা রাখেন একজন সায়িম বা রোজাদার। রোজাদার ক্ষুধা ও প্রচণ্ড পিপাসায় লুকিয়ে পানাহার করলেও তা কেউ দেখতে পায় না। সামনে যথেষ্ট খাবার দাবার, অথচ ক্ষুধায় ও পিপাসায় কাহিল হলেও সামান্যতম খাবারও মুখে পুরেন না রোজাদার। এখানেই রোজার প্রকৃত মাহাত্ম্য নিহিত। রোজা রেখে একজন মুমিন অপরাধে ও অনৈতিক কাজে জড়ায় না। প্রকৃত আল্লাহভীরু রোজাদার কাউকে জুলুম করার কিংবা ঘুষ গ্রহণ করার কথা ভাবতে পারেন না। ব্যবসার নামে ভোক্তাদের ঠকানোকে অত্যন্ত ঘৃণার বিবেচনা করেন রোজাদার। পাপ পঙ্কিলতার যে নিত্য হাতছানি তা থেকে মুক্ত থাকার প্রেরণা এবং শিক্ষা অর্জিত হয় সিয়ামের মাধ্যমে।

অপরাধমুক্ত জীবন গড়ার যে সমস্ত গুণ, প্রশিক্ষণ ও অনুশীলন করা প্রয়োজন তা অর্জিত হয় নামাজ ও রোজার মাধ্যমে। সূরা আনকাবুতের ৪৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাকের শাশ্বত বাণী-‘নিশ্চয়ই সালাত অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।’

আরবি ‘রমজ’ শব্দটি থেকেই ‘রমজান’ এসেছে। ‘রমজ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ দগ্ধ করা, জ্বালিয়ে পুড়িয়ে নিখাদ করা। প্রিয় নবী (.) রমজান মাসের যে অনন্য বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা দিয়েছেন তাতে প্রতীয়মান হয় যে, মাহে রমজান মুসলমানদের নিখাদ ভালো মানুষরূপে গড়ে তুলে। যা এ মাসের স্বকীয়তাকে সমুজ্জ্বল করেছে। কুরআন মজিদের সূরা বাকারার ১৮৫ নং আয়াতে মহান আল্লাহ পাক বলেন, ‘ফামান শাহিদা মিনকুমুশ শাহরা ফাল ইয়াসুমহু’ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন সিয়াম বা রোজা পালন করে। এ আয়াতে করিমা দ্বারা প্রত্যেক সাবালক, সুস্থসক্ষম মুসলিম নরনারীর ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে।

হাদিস শরিফে প্রিয় নবী (.) ইরশাদ করেন, রোজার প্রথম ভাগ (১০ দিন) রহমতের, মধ্যভাগ (১১২০ দিন) মাগফিরাতের এবং শেষ ভাগ (২১৩০ দিন) জাহান্নাম থেকে নাজাতের। আল্লাহ পাক আমাদেরকে রোজার মাহাত্ম্য অনুধাবন করে পাপ পঙ্কিলতামুক্ত পুণ্যময় জীবন গড়ার তৌফিক দান করুন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠন কেন অবৈধ নয় : হাই কোর্ট
পরবর্তী নিবন্ধএবার সাগরিকায় কাটা পড়ল ওয়াসার সঞ্চালন লাইন