পুজোয় বিদ্যানন্দের ‘১০ টাকার হাট’

সমপ্রীতির অনন্য এক উদাহরণ

| সোমবার , ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৭:২১ পূর্বাহ্ণ

বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিপন্ন। আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে অনেকের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কিছুটা ধার দেনা করে দোকান থেকে পণ্য না পেলে অভুক্ত থাকতে হয় তাদের অনেকের। প্রধান উৎসবগুলোতে এসব বঞ্চিত মানুষের অংশগ্রহণ একপ্রকার বিলাসিতা ও অসম্ভব ব্যাপার।

এই বাস্তবতায় আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবকে সামনে রেখে গতকাল রোববার সকাল ১১টায় জামালখান এক্সক্লুসিভ কনভেনশন হলে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘১০ টাকায় পুজোর বাজার’ নামে একটি চ্যারিটি ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। উদ্বোধন করেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রোগ্রামের স্লোগান ছিল ‘সবাই মিলে উৎসব, সবাই মিলে বাংলাদেশ’।

দিনব্যাপী প্রোগ্রামে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিম্ন আয়ের সহস্রাধিক শিশু, মহিলা ও বৃদ্ধ অংশগ্রহণ করেন এবং ১০ টাকার বিনিময়ে নতুন কাপড় কিনেছেন; পরিবারের জন্য বাজার করেছেন। এসব মানুষের আসা যাওয়ার জন্য ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ফ্রি বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা ছিল। এছাড়াও সবার জন্য ছিল নানা আনন্দ আয়োজন ও মিষ্টিমুখের ব্যবস্থা। চাল, ডাল, চিনি, নারকেল, সুজি, ডিম, তেলসহ প্রায় ২৬ রকমের পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছিল একটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুপারশপ। যেখানে মাত্র ৫০ পয়সা দিয়ে ১ কেজি চাল, ১ টাকায় ১ পিস শার্ট, ৪ টাকায় শাড়ি কিংবা ৩ টাকায় লুঙ্গি, ৫০ পয়সায় ১ কেজি সুজি, ৩ টাকায় ১ লিটার তেল, ২ টাকায় ১ প্যাকেট

নুডলস। প্রতি পরিবার ১০ টাকা দিয়ে ১ হাজার টাকার অধিক পণ্যসামগ্রী নিজের পছন্দ মতো বাছাই করে ক্রয় করতে পেরেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ওমেন ইউনিভার্সিটি, অন্যান্য প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি, বিভিন্ন কলেজ ও মাদ্রাসার ৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক বিক্রেতার দায়িত্ব পালন করে এই বাজারে।

চসিক মেয়র তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ ও শক্তি হচ্ছে ধর্মীয় সমপ্রীতি। আজ বিদ্যানন্দের এই ১০ টাকার পুজোর সুপারশপে আমি দেখতে পাচ্ছি সেই সমপ্রীতির এক অনন্য উদাহরণ। এখানে নাম মাত্র মূল্যে নতুন শাড়ি, লুঙ্গি, পাঞ্জাবি, ফ্রক, শার্ট যেমন পাওয়া যাচ্ছে তেমনি সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীও পাওয়া যাচ্ছে। এই ইনোভেটিভ আইডিয়া একদিকে যেমন উৎসবে গরীব মানুষের আনন্দের সহিত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে অন্যদিকে সমাজে পজিটিভ একটি বার্তা যাবে। আমি এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

বিদ্যানন্দের বোর্ড ডিরেক্টর জামাল উদ্দিন বলেন, সারাবিশ্বে ধর্মীয় সমপ্রীতি এখন শতাব্দীর সর্বনিম্ন পর্যায়ে আছে। সবাই হানাহানির মাঝে সমাধান খুঁজে। তাই আমরা এসব উৎসবকে ঘিরে সারা বিশ্বে সমপ্রীতির বার্তা পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য সমপ্রীতিকে ধরে রাখতে চাই। আজকের ১০ টাকার পুজোর বাজারে যারা স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছে তারা প্রায় সবাই মুসলিম হলেও বেশিরভাগ গ্রহীতারা সনাতন ধর্মের। বিদ্যানন্দ সাহায্যের ক্ষেত্রে সবসময়ই জাত ও ধর্ম নিরপেক্ষ।

উৎসবে অংশ নেয়া বালা রানী বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি দুর্গাপুজোর আগে আমাদের দরিদ্র সমাজের জন্য কেউ এত আনন্দ আয়োজন করবে। আজ আমরা খুব খুশি বিদ্যানন্দ এই আয়োজন করেছে। তারা নতুন কাপড় দিয়েছে, এক টাকা দিয়ে সংসারের পুজোর বাজার করতে পেরেছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদুর্গোৎসবে আজ মহাসপ্তমী
পরবর্তী নিবন্ধদুই মাস ধরে অপেক্ষায় আছি, কখন নেমে যাব : তথ্য উপদেষ্টা