পুকুর পাড়কে অনেকেই অনাবাদী করে ফেলে রাখেন। কিন্তু সেই পুকুর পাড়েই নানা জাতের সবজি ও ফলের মিশ্র আবাদ করে বার মাসই ফলন পাচ্ছেন রাঙ্গুনিয়ার চাষিরা। কৃষি অফিসের পরামর্শে এবং সহায়তায় এই ধরনের শতাধিক প্রজেক্ট গড়ে ওঠেছে রাঙ্গুনিয়ায়। পুকুরে মাছ, পাড়ে সবজির পাশাপাশি আম, পেপে, বড়ইসহ নানা ফলের আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন তারা। তাদের দেখাদেখিতে নতুনরাও উদ্যোমী হচ্ছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের হরিহর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের কৃষক শামশুল আলমের ১১টি পুকুরে মাছের প্রজেক্ট রয়েছে। প্রতিটি পুকুরের পাড়ে ৭২টি আম্রপালি এবং তার ফাঁকে ফাঁকে কৃষি অফিস থেকে প্রাপ্ত প্রণোদনার হাইব্রিড মরিচ, টমেটো, লাউ, তরমুজসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করেছেন। যেখান থেকে ফলন আসছে এবং পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করছেন বলে জানান তিনি।
কৃষক শামসুল আলম (৪০) জানান, বছরে ৫ লাখ টাকা ভাড়া চুক্তি নিয়ে এই কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন। এই মৌসুমে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার ধনিয়া পাতা এবং অর্ধ লাখ টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। সামনের রমজানের জন্য আরও ধনিয়া পাতা আবাদ করেছেন। বর্তমানে হাইব্রিড মরিচ এবং হাইব্রিড টমেটোর ফলন এসেছে। এছাড়া তার পুকুর পাড়ে ৭২টি আম্রপালি জাতের আম গাছ আছে। এর ফাঁকে ৮১৫টি তরমুজের চারাতে বর্তমানে ফলন এসেছে। এক মাস পর বিক্রির উপযুক্ত হবে। শুধুমাত্র এই কৃষি প্রজেক্ট গড়েই তিনি স্বাবলম্বী হয়েছেন এবং এটিই তার একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম বলে জানান।
একই ইউনিয়নের নারিশ্চা বাজার সংলগ্ন এলাকায় চারটি পুকুর লিজ নিয়ে সমন্বিত কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তুলেছেন অপর কৃষক ছমির উদ্দিন (৬০)। পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি পাড়ে তিনি মাল্টা, লেবু, জাম্বুরা, কমলা, পেঁপে আবাদ করেছেন। এসবের মাঝখানে সবজি আবাদ করেছেন। যেখান থেকে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, লাল শাকসহ নানা সবজির ফলন এসেছে এবং বিক্রি করে ভালোই উপার্জন হচ্ছেন বলে তিনি জানান।
পদুয়া ইউনিয়নে কর্মরত উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পল্লবী চক্রবর্তী জানান, এগুলোর মতো পদুয়ায় আরও একাধিক পুকুর পাড়ে মিশ্র ফলের আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অনেকেই। তারা নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি আরও অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। তাদের এমন ব্যতিক্রমী চাষে আগ্রহী হয়ে অনেকেই ঝুঁকছেন এমন চাষে। নতুন উদ্যোক্তাদের কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক সহায়তা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
জানা যায়, শুধুমাত্র পদুয়ায় নয়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভার শতাধিক কৃষি প্রজেক্টে এই ধরনের সমন্বীত আবাদ হচ্ছে। কৃষি অফিসের সার্বিক সহায়তা এবং প্রণোদনা দেয়ায় দিন দিন উদ্যোক্তা বাড়ছে বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস।