রাউজানের দুই স্থান থেকে গতকাল মঙ্গলবার ২ জন নারী-পুরুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সকালে কদলপুরের সোমবাইজ্যারহাট এলাকার খালপাড় থেকে উদ্ধার করা হয় জালাল আহমেদ (৬০) নামের এক ব্যক্তির লাশ। তিনি কদলপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ভোমরপাড়া গ্রামের মৃত তনজিল আহমেদের পুত্র। দুপুরে গহিরার দলইনগর এলাকার পদ্মপুকুর থেকে উদ্ধার করা হয় নাছরিন আকতার সুবর্ণা নামের এক নারীর লাশ। ওই নারী ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দক্ষিণে জে কে মেমোরিয়াল হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকার জনৈক মনছুর আলম চৌধুরীর স্ত্রী। তাদের মোত্তাকিম নামের এক সন্তান রয়েছে।
ঘটনাস্থলে মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, সুবর্ণার বাপের বাড়ি ফটিকছড়ির জাহানপুর এলাকায়। মনছুরের সাথে তার বিয়ে হয় ১৭ সালে। পারিবারিক অশান্তির কারণে সুবর্ণা বাপের বাড়িতে চলে যায়। সেখানেই তার সন্তান ভুমিষ্ঠ হয়। স্বামী মনছুর মাঝে মধ্যে স্ত্রী-সন্তানকে দেখতে শ্বশুর বাড়িতে যেতেন। তবে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা ছিল কম। এমন পরিস্থিতিতে তিনি গত ৬ ডিসেম্বর সকালে ছেলে নিয়ে স্বামীর বাড়িতে আসেন। পরিবারের সদস্য সেলি আকতারের কাছে সন্তান মোত্তাকিমকে রেখে তিনি আবার অজানা গন্তব্যে চলে যান। স্বামীর পরিবার থেকে কেউ তাঁর খোঁজ নেয়নি।
স্থানীয় চেয়ারম্যান নুরুল আবসার বাঁশি জানান, তিনি তাঁর অসুস্থ মাকে নিয়ে শহরে আছেন। গতকাল সকালে তাকে পদ্মপুকুরে লাশ দেখতে পাওয়ার খবর দেন জামাল নামের স্থানীয় এক লোক। এরপর তিনি পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে চৌকিদার কনিকা বড়ুয়াসহ চৌকিদারদের ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। স্থানীয় দুই যুবকের সহযোগিতায় ভাসমান লাশটি টেনে কাছে আনেন বলে জানান চৌকিদার কনিকা। লাশটির পা ছিল উপরের দিকে, মাথাসহ শরীর ছিল পানির ভেতরে। পুলিশের উপস্থিতিতে লাশ তুলতে গিয়ে দেখা যায়, লাশটি নারীর, গলায় কয়েকটি ইট ওড়না দিয়ে বাঁধা। এই নারীর স্পর্শকাতর স্থানে রয়েছে আঁচড়ের চিহ্ন। তাঁর বোন নাছিমা আকতার ঘটনাস্থলে আহাজারি করতে করতে দাবি করেন, তার বোনের স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা তাকে হত্যা করে পানিতে ফেলে লাশ গুম করতে চেয়েছিল।
কদলপুরের ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, জালাল আহমেদ এক সময় প্রবাসে ছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরে সংসার করছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে। তাই প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেও তার সম্পর্কের অবনতি হয়। এসব ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ করেন জালালের বিরুদ্ধে। এমন হতাশার মধ্যে নিজ বাড়ি ছেড়ে তিনি ভাড়া বাসায় চলে যান।
স্থানীয়রা জানায়, গত সোমবার সন্ধ্যায় জালালকে দেখা গেছে সোমবাইজ্যারহাট এলাকায় একটি চা দোকানে। সকালে তাঁর লাশ পাওয়া যায় ওই এলাকার খাল পাড়ে ঝোপের মধ্যে। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে সহকারী পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, দুটি লাশ পুলিশ উদ্ধার করে সুরুতহাল রেকর্ড করে মর্গে পাঠিয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলেই প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে নারীর লাশের ধরণ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলে তিনি ধারণা করছেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হতভাগ্য নারী সুবর্ণার স্বামী মনছুরকে থানায় নিয়ে যায়।