চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের “অপারেশনাল ফ্রেমওয়ার্ক অফ কমোডিটি ডেরিভেটিভস অ্যান্ড ইটস বিজনেস প্রোসপ্যাক্টস” শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির ভাষণে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আমাদের পুঁজিবাজার এখনো গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। অনেকেই ব্যাংক থেকে স্বল্প মেয়াদী ঋণ নেয়ার ফলে মিসম্যাচ তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাজার দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগের ক্ষেত্র হলেও এতে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের জিডিপির চেয়ে সে দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজারের অবদান দ্বিগুণ। বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেট ওভার রেগুলেটেড বিধায় দুর্নীতি হয়। এখানে দরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা।
গতকাল বিকেলে নগরীর হোটেল রেডিসন ব্লু’তে এই কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্টক ব্রোকার, ডিলার, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, বাণিজ্যিক ব্যাংক, লিস্টেড কোম্পানি, কমোডিটি ইকোসিস্টেম সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি এবং বিনিয়োগকারীরা অংশ নেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নীতিগতভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দেশের পুঁজিবাজারকে ডিরেগুলেটেড করা হবে। ন্যূনতম রেগুলেটরি ভূমিকা রেখে বাকিটা ডিরেগুলেটেড করা হবে যাতে দুর্নীতি লোপ করে পুঁজিবাজারকে সামগ্রিকভাবে আরও গতিশীল করা যায়। তিনি বলেন, আমাদের মার্কেট ডিস্টর্টেড বলেই প্রোপার অপারেশন হচ্ছে না। তিনি সেই সাথে ক্যাপিসিটি বিল্ডিং নিশ্চিত করতে বলেন। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশে সফল হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, যার কাছে যত বেশি তথ্য আছে সে–ই তত বেশি ধনী। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ আপনাদের দেবে বিভিন্ন তথ্যের কমোডিটির প্রবাহ। তিনি বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, অনেকদিন পর সিএসইর অনুষ্ঠানে এসে নিজের বাড়িতে ফিরে আসার আবেগ বোধ করছি। সিএসই নিয়ে আমার যাত্রা শুরুর সাথীদের অনেককেই আজ দেখতে পাচ্ছি।
অনুষ্ঠানে সিএসইর চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, পরিচালক মেজর (অবঃ) এমদাদুল ইসলাম, নাজনীন সুলতানা, মোহাম্মদ আকতার পারভেজ, সাবেক সিএসই পরিচালক এবং বি রিচ লিমিটেডের চেয়ারম্যান শামসুল ইসলাম এবং সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. সাইফুর রহমান মজুমদার বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বিষয়ক বিদেশি বিশেষজ্ঞ চেল্লা সফটওয়ার প্রাইভেট লিমিটেডের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার কাথির কামানাথান আন্নামালাই এবং সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকাউন্ট) সুব্বিয়া রাজা গোপাল। এ সময় সিএসইর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিএসই চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান বলেন, সিএসই আগামী ছয় মাসের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। আগামীতে বিজনেস মডেল বিষয়ে ব্রোকারদের সাথে আলোচনায় বসবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সিএসইর দেশে প্রথম কমোডিটি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠা গর্বের বিষয়। তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন। কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের জন্য সম্পূর্ণ নতুন ধারণা এবং পুঁজিবাজারের জন্য নতুন অ্যাসেট ক্লাস। যদিও বাংলাদেশের পুঁজিবাজার দীর্ঘদিন ধরে ইকুইটি নির্ভর এবং কিছু ব্রোকার, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং ব্যাংক ইত্যাদি মধ্যস্থতাকারী নিয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে, কমোডিটি ডেরিভেটিভস চালুর ফলে ইকোসিস্টেমে ওয়্যার হাউজ সার্ভিস প্রোভাইডার, কোয়ালিটি অ্যাসেয়ার–এর মতো নতুন নতুন ইন্টারমিডিয়ারি অন্তর্ভুক্ত হবে। এই অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সমৃদ্ধ হবে এবং বাংলাদেশের কমোডিটি ইকোসিস্টেমে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধনের মাধ্যমে উন্নত বাজার–ব্যবস্থা গঠন সহজতর হবে। ফলে সুনিয়ন্ত্রিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কমোডিটি ডেরিভেটিভস মার্কেট গঠনের মাধ্যমে প্রাইস ডিসকভারি ও হেজিং সুবিধার পাশাপাশি সৃষ্টি হবে নতুন বিনিয়োগ, যা প্রাতিষ্ঠানিক ও সাধারণ বিনিয়োগকারিদের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
কর্মশালায় উপস্থিত অংশীজন ও আলোচকগণ কমোডিটি ডেরিভেটিভস এক্সচেঞ্জ প্লাটফর্মের সম্ভাব্য ব্যবসায়িক সুযোগ–সুবিধা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন এবং তারা বৈশ্বিক অভিজ্ঞতা, পরিচালন কাঠামো ও অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরেন। তারা ডেরিভেটিভ মার্কেট গঠনে স্বচ্ছতা, কাঠামোবদ্ধতা ও ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।