টানা দরপতনের মধ্যে থাকা পুঁজিবাজারে সপ্তাহের চতুর্থ কর্মদিবসে মূল্য সূচক একশ পয়েন্টেরও বেশি কমার কারণে বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গতকাল বুধবার কেবল ৩৯টি কোম্পানির শেয়ারে দর বৃদ্ধির বিপরীতে ৩৪৭টির দরপতনে বিনিয়োগকারীরা হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। ফেসবুককেন্দ্রিক বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন গ্রুপে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন–বিএসইসি ঘেরাওয়ের জন্য আহ্বান করা হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতন ঘটে, সেগুলোর হিসাব থাকে লাল রঙে, যেগুলোর দাম বাড়ে, সেগুলো থাকে সবুজ রঙে। ফলে বুধবার পুরো হিসাবে লাল রঙের সমাহার দেখা গেছে। পুঁজিবাজারে সংস্কার নিয়ে রোডম্যাপ তৈরির জন্য সোমবার থেকে অংশীজনদের সঙ্গে বিএসইসির আলোচনার তিন দিনে সূচক কমল ২০৪ পয়েন্ট, বাজার মূলধন কমল ১৩ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা।
গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২৮টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়ার পর ৬ কর্মদিবসেই বাজার মূলধন কমল ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি, সূচক কমল ২৮২ পয়েন্ট। বুধবার ১৩২ পয়েন্ট দরপতনে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ–ডিএসইর সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স নেমে এসেছে ৫ হাজার ৪৫৩ পয়েন্টে, যা গত ৭ অগাস্টের পর সর্বনিম্ন।
বড় দরপতনের এই দিনে বাজারে লেনদেন হয়েছে ৪৪০ কোটি ৮৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। গত ৮ অগাস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এটি দ্বিতীয় সর্বনিম্ন লেনদেন। আগেরদিন হাতবদল হয় ৩৮৯ কোটি ৪৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকার শেয়ার। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগের দিন সূচক এর চেয়ে কিছুটা কম থাকলেও বিনিয়োগকারীর লোকসান ছিল এখনকার তুলনায় কম। ৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইএঙের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ২২৯ পয়েন্ট। সরকার পতনের পর চার কর্মদিবসে সূচক বাড়ে প্রায় আটশ পয়েন্ট। সে সময় এক দিনে লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলে। সে সময় যারা বিনিয়োগ করেছেন, তাদের সেই সিদ্ধান্ত এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে। প্রাথমিক সেই উচ্ছ্বাস থেমে যাওয়ার পর ১২ অগাস্ট থেকে সূচক কমেছে ৫৬১ পয়েন্ট, বাজার মূলধন কমেছে ৩৭ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। তবে দুই মাসেরও কম সময়ে ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণ ফোন ও বিএটি বাংলাদেশের মত অল্প কিছু কোম্পানির শেয়ারদরেই কেবল উত্থান হয়েছে, যে কারণে সূচক বেড়েছে। এই তিনটি কোম্পানির বাজার মূলধন বেড়েছে ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কেবল তিনটি কোম্পানিতে এই উত্থান না হলে বাজার মূলধন আরও কমত।
বিনিয়োগকারীরা এমনিতেই আস্থার অভাবে ভুগছেন, এমন সময়ে এক দিনে ২৮টি কোম্পানিকে জেড শ্রেণিতে নিয়ে যাওয়া হয় গত ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে। যেটি দরপতনকে আরও ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে করেন বিনিয়োগকারীরা। প্রধান সূচক ডিএসইএঙের পাশাপাশি শরিয়াভিত্তিক কোম্পানিগুলোকে নিয়ে গঠিত শরিয়া সূচক ৩২ পয়েন্ট এবং ‘ব্লু’ চিপ খ্যাত ডিএস৩০ সূচক কমেছে ৫১ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজারে এভাবে দরপতনের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ডিবিএ সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিনিয়োগকারীরা টাকা হারাতে হারাতে তাদের আর জায়গা নেই। শুধু নীতি করলেই চলবে না, তাদেরও তো একটি আস্থার বার্তা দিতে হবে। এজন্য নীতি নির্ধারক পর্যায় থেকে একটি আশার বাণী আসা দরকার।