প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে পলাতক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদারকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে আনা সংক্রান্ত মামলায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল লিজিং এন্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) চার আমানতকারীকে পক্ষভুক্ত করেছে হাই কোর্ট। এ চার আমানতকারী হলেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে নাশিদ কামাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের সাবেক পরিচালক বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শওকতুর রহমান, সামিয়া বিনতে মাহবুব ও খালেদ মনসুর ট্রাস্টের হিসাব শাখার কর্মকর্তা তরিকুল ইসলাম।
আইনজীবী ছাড়াই এ মামলাটিতে তারা তাদের বক্তব্য ও যুক্তি তুলে ধরতে পারবেন বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাই কোর্ট বেঞ্চ গতকাল রোববার এই চারজনকে পক্ষভুক্ত করার আদেশ দেয়। খবর বিডিনিউজের।
এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। এই কোম্পানির গ্রাহকদের কোটি কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পি কে হালদারের পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে আমানতের টাকা ফেরতের নির্দেশনা চেয়ে সাত ব্যক্তি হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে বিষয়টি আদালতে গড়ায়।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিনউদ্দিন মানিক। পিপলস লিজিংয়ের সাবেক চেয়ারম্যান ও এক পরিচালকের পক্ষে ছিলেন মো. মোশাররফ হোসেন।
খুরশীদ আলম বলেন, একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছিলেন আদালত। সেটা আজ দাখিল করেছি। পিকে হালদারের বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল জারির পর এই চার ভিকটিম আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা আদালতে কথা বলার সুযোগ চান। সে অনুযায়ী আজ তারা আমার চেম্বারে আসলে আমি আদালতের অনুমতি নিই। আদালত তাদের কথা শুনেছেন। পরে আদালত তাদের তাদের পক্ষভুক্ত করে তাদের কথাগুলো লিখিত আকারে দাখিল করতে বলেছেন। এখন এ মামলায় আইনজীবী ছাড়াই এই চার আমানতকারী তাদের বক্তব্য ও যুক্তি তুলে ধরতে পারবেন। মামলাটি মঙ্গলবার আবার আদালতের কার্যতালিকায় আসবে বলে জানান এই আইনজীবী।
সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নাশিদ কামাল আদালতে বলেন, এখানে আমার, আমার চাচা মোস্তফা জামান আব্বাসী ও ফুফু-ফুফার টাকা রয়েছে। কোম্পানির এই অবস্থা শোনার পর তিনি প্যারালাইজড হয়ে গেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন স্থানে ধর্না দিয়েছি। কোনো ফল পাইনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবন্ধিত হওয়ার পরও আমরা টাকা রাখার যদি কোনো আস্থা না পাই, তাহলে এ দেশের উন্নয়নের সঙ্গে আমাদের অগ্রগতি কীভাবে থাকবে? এখানে যদি নিরাপদ না থাকে তাহলে আর কাকে বিশ্বাস করব?
আমানতকারী সামিয়া বিনতে মাহবুব বলেন, আমি একজন গৃহিণী। আমি ক্যান্সারের রোগী। আমি ২০১৭ সালের প্রথম দিকে পিপলস লিজিং এ টাকা রেখেছিলাম। যেটা কিনা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদিত, নিবন্ধিত। এমনকি ঢাকা ও চট্টগ্রাম শেয়ার মার্কেটে অন্তর্ভুক্ত। বিশ্বাস নিয়ে সেখানে টাকা রেখেছি আমি এবং আমার স্বামী। সারা জীবনের অর্থ জমা করে এক কোটি টাকা রেখেছি। এর মধ্যে আমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। এরপর থেকে আমি চাকরি করছি না। করোনার মধ্যে আমার স্বামীরও চাকরি নাই। এখন কোনো আয় নেই আমাদের। আমরা নিদারুণ দিন যাপন করছি। চরম অর্থ সঙ্কটে জীবন যাপন করছি। টাকার জন্য সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছি না।
কান্নায় ভেঙে পড়ে সামিয়া বলেন, বাস্তব পরিণতি কী হবে, এটা না বুঝেই এ প্রতিষ্ঠানে আমরা টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু পি কে হালদার গং এভাবে টাকা নিয়ে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আমরা যারা টাকা জমাকারীরা সরল বিশ্বাসে টাকা রেখেছি। আমরা কেন এত কষ্ট পাব?
এসব বক্তব্য শোনার পর বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বেদনাদায়ক বলে মন্তব্য করেন। তিনি চার আমানতকারীকে তাদের বক্তব্য লিখিত আকারে দাখিল করতে বলে তাদের পক্ষভুক্ত করেন।












