পিসি রোডের ফুটপাতে নিম্নমানের টাইলস

কাজ বন্ধের নির্দেশ দিলেন ক্ষুব্ধ মেয়র দুই কর্মকর্তাকে শোকজ, ঠিকাদারকে চিঠি

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৪:৫০ পূর্বাহ্ণ

নগরীর পোর্ট কানেকটিং রোডের (পিসি রোড) ফুটপাতে লাগানো হচ্ছিল ‘নিম্নমানের’ টাইলস। গতকাল সকালে আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে তা হাতনাতে ধরে ফেলেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। নির্দেশ দেন কাজ বন্ধের। এছাড়া কাজ তদারককারী সুপারভাইজারকে স্পটে দেখতে না পেয়ে মুঠোফোনে বকা দেন কর্পোরেশনের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীকে। পরে মেয়রের নির্দেশে চসিকের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিনহাজ উদ্দিন ও সুপারভাইজার আরিফুল হককে শোকজ করা হয়। এ ছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘তাহের ব্রাদার্স’কে টাইলসগুলো দ্রুত সরিয়ে নিতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, জাইকার অর্থায়নে চারটি প্যাকেজে পিসি রোড ও সংলগ্ন ফুটপাত সংস্কার এবং উন্নয়ন কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। বর্তমানে অলংকার থেকে নিমতলা অংশের প্যাকেজে কাজ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্স। গতকাল মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আকস্মিক পরিদর্শনে যান নিমতলা এলাকায়। এসময় তিনি প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে ফুটপাতে লাগানো টাইলস পর্যবেক্ষণ করেন। লাগানো টাইলস নিম্নমানের হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ক্ষুব্ধ মেয়র নিজ হাতে বেশ কিছু টাইলস তুলে ছুঁড়ে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাগানো টাইলসের অধিকাংশ ভাঙা অবস্থায় দেখতে পেয়ে রেগে যান মেয়র। ভাঙা টাইলসের খণ্ডাংশ জোড়া দিয়ে লাগানো হচ্ছিল বলেও জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা। তখন মেয়র কাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। মেয়র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীলদের খোঁজ করলেও কাউকে পাননি।
এসময় মেয়রকে চসিকের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলতে দেখা যায়। মেয়র জানতে চান, সুপারভাইজার কোথায়? প্রকৌশলীকে উদ্দেশ্য করে মুঠোফোনে মেয়রকে বলতে শুনা যায়, মাটি কতগুলো লাগাচ্ছে, আপনারা ওখানে বসে আছেন? বলছিলাম বিল্ডকমের টাইলস লাগানোর জন্য। এখানে সুপারভাইজার কোথায়? সকাল থেকে ঘুরছি, এখানে কেউ তো নাই। আপনারা ফাইজালামি শুরু করছেন, তাই না? এরপর কল কেটে দেন মেয়র। এদিকে মেয়রকে দেখে এগিয়ে আসেন পথচারী এবং স্থানীয় লোকজন। তারা বিভিন্ন অভিযোগ করেন। কেউ কেউ সিমেন্টের মান নিয়েও প্রশ্ন করেন। একজন বলেন, বালির উপর কোনোমতে টাইলস বসিয়ে দিচ্ছে। তখন মেয়র জনগণের উদ্দেশ্যে নিম্নমানের টাইলস প্রসঙ্গে বলেন, এগুলো লাগাচ্ছে আপনারা দেখেন না। আপনাদের টাকা দিয়েই তো এগুলো লাগানো হচ্ছে। এখানে যে মাটি লাগাচ্ছে আর তা আপনারা চেয়ে আছেন। বিল্ডকমের টাইলস ছাড়া কোনো কিছু লাগাতে দিবেন না। আপনাদের কেউ কিছু বললে সরাসরি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
এসময় একজন পথচারী বলে উঠেন, তারা (ঠিকাদারের লোকজন) বলেছে, টাইলসগুলো নাকি কাঁচা। তখম মেয়র বলেন, টাইলস আম নাকি। এখন কাঁচা এবং পরে পেঁকে যাবে। আপনারা লোকাল মানুষের কাজ কী? আপনাদেরও তো দায়িত্ব আছে। শহর কি শুধু আমার একার? এসময় স্থানীয় এক লোক বলেন, স্যার, আমাদের কথা কেউ মানতে চাই না, সরকারি কাজ তো। তখন মেয়র বলেন, সরকার কে? আপনারাই তো সরকার।
মেয়র বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নানা অবহেলার কারণে এবং বন্দরের মালামাল পরিবহনসহ যাত্রীবাহী যানবাহন ও এলাকাবাসীক নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কোনোরূপ অবহেলা বা কাজর গুণগত মান নিয় প্রশ্ন উঠলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তসহ আর্থিক জরিমানার সম্মুখীন করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, মেয়র মহোদয়ের নির্দেশে দুইজনকে শোকজ করেছি এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি। চিঠিতে কি লেখা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, টাইলসগুলো দ্রুত অপসারণ করতে বলেছি। এধরনের টাইলস আর না লাগাতে বলেছি। যদি আমাদের অজ্ঞাতসারে লাগায় তাহলে তার বিল দেয়া হবে না জানিয়ে দিয়েছি।
জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সৈয়দ নূর দৈনিক আজাদীকে বলেন, টাইলসগুলো নিম্নমানের না। আসলে অল্প সময়ে কাজের চাপে বেশি পরিমাণে মাল নেয়ার কারণে কিউরিং প্যানেল কম হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধমুরাদের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ স্ত্রীর, থানায় জিডি