পিতা-মাতার সেবার মাধ্যমে মিলে জান্নাত ও আল্লাহর সন্তুষ্টি

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | মঙ্গলবার , ২৫ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

পিতামাতার সেবা ও খেদমতকে ইসলামে জোর দেওয়া হয়েছে। পিতামাতার সঙ্গে সদাচরণ, সদ্ব্যবহার, তাঁদের আনুগত্য ও তাঁদের প্রতি ইহসান করার তাগিদ দেয়া হয়েছে কোরআনহাদিসে। পিতামাতার খেদমতের প্রসঙ্গে কোরআন মজিদের সূরা বনি ইসরাইলের ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে মহান আল্লাহপাকের বাণী-‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করো না এবং মাতাপিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাঁদের মধ্যে একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সঙ্গে শিষ্টাচারপূর্ণ কথা বলো। তাদের সামনে ভালোবাসার সাথে নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম করো, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন পালন করেছে।’ তিরমিজি শরিফের এক হাদিসে রাসূলে পাক (.) বলেন, তিনজনের দোয়া অবশ্যই কবুল হয়। মজলুমের, মুসাফিরের এবং মাতাপিতার। সূরা লোকমানের ১৪ নং আয়াতে আল্লাহপাক বলেন, ‘আমি মানুষকে তার পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভধারণ করেছে। তার দুধ ছড়ানো দুই বছরে হয়। নির্দেশ দিয়েছি যে আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। আমার কাছেই তোমাকে ফিরে আসতে হবে।’ হযরত বশির (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (.) বলেছেন, ‘যে লোক মায়ের কাছে অবস্থান করে তার নির্দেশ মতে চলে, সে তরবারি নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। মায়ের দিকে ভক্তি মহব্বতের সঙ্গে তাকানোর চেয়ে মহৎ কাজ আর নেই।’ প্রিয় নবী (.) বলেন, পিতামাতার দিকে একবার তাকানো কবুল হজের সওয়াব। পিতা মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং মাতা পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহ পাকের অসন্তুষ্টি (তিরমিজি শরিফ)। প্রিয় নবী (.) আরো বলেন, ‘আল্লাহপাক সকল গুনাহ বা পাপের শাস্তি যতদিন ইচ্ছা বিলম্ব করেন, এমনকি তা কিয়ামত পর্যন্ত বিলম্বিত করেন, কিন্তু মাবাবার সঙ্গে অবাধ্যতার শাস্তি মৃত্যুর পূর্বেই দিয়ে থাকেন। অর্থাৎ কিয়ামতের আগেই পিতা মাতার অবাধ্যকারীর শাস্তি শুরু হয়ে যায়।’ রাসূলে পাক (.) বলেন, চার শ্রেণির লোককে আল্লাহপাক জান্নাতে প্রবেশ করতে দেবেন না। মদখোর,সুদখোর,এতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারী এবং মাতাপিতার অবাধ্যকারী (হাকেম)। হাদিস শরিফে রয়েছে,’একদিন জুমার দিনে প্রিয় নবী (.) মিম্বরের প্রথম ধাপে পা রেখে বললেনআমিন। অতঃপর দ্বিতীয় ধাপে পা রেখেও বললেনআমিন! এরপর তৃতীয় ধাপে পা রাখলেন এবং বললেনআমিন। নামাজ শেষ হলে সাহাবায়ে কেরাম প্রিয় নবী (.) এর কাছে তিনবার আমিন বলার কারণ জানতে চাইলেন। তখন প্রিয় নবী (.) বললেন, আমি যখন মিম্বরের প্রথম ধাপে পা রাখলাম তখন জিবরাইল (.) এলেন এবং আমাকে বলেন, আল্লাহপাক বলেছেন, যারা মাতাপিতা উভয়কে বা একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় পেয়েও তাঁদের খেদমতের মাধ্যমে জান্নাত অর্জন করতে পারলো না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি বললামআমিন। আমি যখন মিম্বরের দ্বিতীয় ধাপে পা রাখলাম তখন জিবরাইল (.) বললেন, যারা রমজান মাস পেল, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তাদের গুনাহ মাফ করতে পারল না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি তাতে সাড়া দিয়ে বললাম, আমিন! আমি যখন মিম্বরের তৃতীয় ধাপে পা রাখলাম তখন জিবরাইল (.) বললেন, যারা আপনার (রাসূল (.) এর নাম মোবারক শুনল, কিন্তু আপনার ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করলো না, তারা ধ্বংস হোক। তখন আমি বললামআমিন। (অর্থাৎ আল্লাহ পাক কবুল করুন)(মুসলিম শরিফে এ হাদিস রয়েছে)। পিতামাতা অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করে সন্তানদেরকে লালন পালন করেন। বার্ধক্য অবস্থায় পৌঁছলে তারা খুবই অসহায়ত্ব বোধ করেন। তাই, তাঁদের প্রতি তাজিম সম্মান শ্রদ্ধা প্রদর্শন করাই আল্লাহপাক ও প্রিয় নবীর (.) নির্দেশনা। যা মেনে চলা সন্তানদের ওপর ফরজ বা অত্যাবশ্যক। এই রোজার মাসে আমরা মাতাপিতার প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে পারি। তাঁদের অকৃত্রিম সেবা এবং শ্রদ্ধা ভালোবাসা আনুগত্যের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি। পিতামাতার স্থান বৃদ্ধাশ্রমে নয়, বরং সন্তানদের পরম যত্ন, খেদমত ও ভালোবাসায় পিতামাতারা হাসিআনন্দে দিন যাপন করুক। কেননা, তাঁরাই তো আমাদের জান্নাত লাভের উসিলা।

পুনশ্চ : এই কলামে গতকাল ১ম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত লেখার শুরুতে ‘রোজা শেষে ১ শাবান দিনের বেলায় খাবার গ্রহণকে ফিতর বলা হয়’ পরিবর্তে ‘১ শাওয়াল পড়তে হবে’। এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভয়াল কালরাত আজ, গণহত্যা দিবস
পরবর্তী নিবন্ধসন্দ্বীপবাসী দেখল নতুন এক ভোর