আমরা প্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন টিভি চ্যানেল বা খবরের কাগজ পড়ে এমন কিছু ঘটনা জানতে পারি তা সত্যি বিবেককে গভীরভাবে নাড়া দেয়, বিশেষ করে সন্তান যখন একটা সময় এসে বাবা-মাকে চরম অবহেলা ও অবজ্ঞা করছে। তখন ভাবি আমাদের শিক্ষা, চিন্তাধারা আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে প্রযুক্তির উন্নয়নে শিক্ষা, চিকিৎসা, সংস্কৃতি, যোগাযোগ, কর্মসংস্থানের উন্নতি হচ্ছে, সেখানে আজ কেন শিক্ষার ভিতরে অনেকেরই মানবিকতা ও বিবেক শূন্য হয়ে পড়েছে। কেন তারা বিবেকবোধ মানবিকতা, পারিবারিক শিক্ষা অর্জনে পিছিয়ে যাচ্ছে? কোথায় গলদ শিক্ষার? যে সন্তানকে লালন পালন করতে গিয়ে মা- বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলেছেন, তাদের কেন বৃদ্ধ বয়সে এত কষ্ট ও অসহায় জীবন যাপন করতে হয়। অনেকে সন্তানের থেকে খাওয়া তো দূরের কথা নিজের গড়া ভিটেতে স্থান পায় না। এই যদি দিনের পর দিন সমাজের চিত্র হয় তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম থেকে কিই বা আশা করা যায়। তারা শুধু নিজেকে নিয়ে এবং নিজের স্ত্রী সন্তান নিয়ে ব্যস্ত থাকবে, সেখানে মা- বাবা তুচ্ছ। অনেক বাবা মা সন্তান কে শুধু পাশের শিক্ষাটা দিয়ে তার পাশাপাশি সন্তানের ভবিষ্যৎ আরাম আয়েশের কথা ভেবে বৈধ অবৈধ পথে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়ার চেষ্টায় রত থাকেন। আমি সেই সব বাবা মাকে তেমনটা সম্মান দেখাতে পারছি না। কারণ তাদের অঢেল টাকায় সন্তানের জন্য গড়া বাড়ি গাড়িতে শেষ পর্যন্ত নিজেরা-ও শান্তিতে থাকতে পারে না, আবার অনেকে স্থানটুকুও পায় না। এমন বাস্তব অহরহ ঘটনা আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি। সন্তান কে অবশ্যই পারিবারিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে হবে। যে শিক্ষায় পুঁথিগত বিদ্যার পাশাপাশি মানবিকতা,দায়িত্ববোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ, পরোপকারী এবং বয়স্কদের সেবামূলক কাজের মনমানসিকতায় গড়ে তুলতে হবে। আবার অনেকেই আছেন নিজেদের স্ত্রী সন্তান নিয়ে দেশ বিদেশে বিভিন্ন টুরিস্ট স্পট এ প্রমোদভ্রমণে বেরিয়ে যান। তাদের জন্য তখন পরিবার হয়ে উঠে শুধু মাত্র স্ত্রী সন্তান নিয়ে। সেখানে বয়স্ক বাবা মা কে আনন্দের ভাগীদার করেন না। অথচ ঐ বয়সে তাদের সবচেয়ে বেশি বিনোদনে আনন্দ দিয়ে ভালো রাখার কথা। এ থেকে সন্তান দূরত্ব শিখে, বিচ্ছিন্নতা শিখে। সেটা আমাদের সবার মাথায় রাখা উচিত। যদি সমাজে অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষের দ্বারা বাবা-মা মানসিক, শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয় আবার কেউ রাস্তায় ও বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে রেখে চলে যায়, তাহলে সে তুলনায় দেখা যায় কম শিক্ষিতরাই বাবা-মা কে সেবামূলক ভালোবাসায় এগিয়ে আছে। তারা বৃদ্ধাশ্রম চেনা তো দূরের কথা, এই শব্দটা উচ্চারণও করতে পারে না। তাই আসুন আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং সেবায় নিয়োজিত থেকে সন্তানদের সঠিক শিক্ষা দিয়ে বৃদ্ধ বয়সে একটুখানি সুখের ইনভেস্ট করি। আমাদের মনে রাখা উচিত আজকে তাদেরকে দেওয়া ভালোবাসায় ভরা প্রতিটা সুন্দর দিন, ভবিষ্যতে হবে আপনার, আমার, আমাদের সকলের।