পিএবিএক্স ‘ডেড’ সাড়ে তিন বছর

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৪:৪২ পূর্বাহ্ণ

অন্তত সাড়ে তিন বছর ধরে বিকল (ডেড) হয়ে আছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মধ্যকার টেলিফোনের আন্তঃসংযোগ (পিএবিএক্স)। পিএবিএক্স অচল থাকায় প্রায় অর্ধশত ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসকনার্স ও অন্যান্য কর্মচারীর সাথে ইন্টারনাল যোগাযোগের সুযোগ নেই হাসপাতাল প্রশাসনের। এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডেও যোগাযোগের সুবিধা নেই। বলতে গেলে মোবাইলই একমাত্র ভরসা।

পিএবিএক্সএ যোগাযোগ করতে না পারায় জরুরি মুহূর্তে ওয়ার্ডে কারা দায়িত্বে আছেন, সেটিও তাৎক্ষণিক জানার সুযোগ হচ্ছে না। এতে চিকিৎসা সেবাসহ সার্বিক কার্যক্রম তদারিকতে নানা জটিলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে হাসপাতাল প্রশাসনকে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। রোগীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। পিএবিএক্স চালু থাকলে ওয়ার্ডগুলোতে ইন্টারনালি যোগাযোগে সুবিধা হতো মন্তব্য করে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, এটি (পিএবিএক্স) আমার যোগদানের কয়েক বছর আগে থেকেই অকেজো বলে জানতে পেরেছি। অচল থাকায় ইন্টারনালি যোগাযোগে আমাদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। এর প্রয়োজনীয়তাও আমরা ফিল করছি। যার কারণে এই পিএবিএক্স চালুকরণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। টেশিসকে (টেলিফোন শিল্প সংস্থা) চিঠি দেয়া হয়েছে। তাদের সাথে মোবাইলে কথাও হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই এই পিএবিএক্স পুনরায় চালু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

চমেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে বর্তমানে ৪৬টি ওয়ার্ড রয়েছে। এসব ওয়ার্ড ও প্রশাসনিক কার্যালয়ের মধ্যকার ইন্টারনাল যোগাযোগের সুবিধার্থে ২০১৭ সালের দিকে একটি ডিজিটাল পিএবিএক্স স্থাপন করা হয়। হাসপাতাল জুড়ে এর প্রায় পাঁচশ লাইন (সংযোগ) দেয়া হয়। তবে ২০১৯ সালের ২৩ জুলাই থেকে এই সংযোগ অকেজো হয়ে আছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে মেশিনটি অচল হয়ে পড়ে বলে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে। অচল এই পিএবিএক্স চলকরণে ওই বছরের (২০১৯ সালের) ৫ আগস্ট টেশিসএর জেনারেল ম্যানেজার বরাবর চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে অচল পিএবিএঙ মেশিনটি জরুরি ভিত্তিতে সচলকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়। তবে টেশিসএর পক্ষ থেকে পরবর্তীতে মেশিনটি রক্ষণাবেক্ষনের চুক্তি নবায়নের কথা বলা হয়। কিন্তু করোনা সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে মেশিন রক্ষণাবেক্ষনের ওই চুক্তি স্থগিত করে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের ২৭ আগস্ট হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীরের স্বাক্ষরে এ সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হয়। এরপর পিএবিএঙটি চালুকরণে কোন উদ্যোগের তথ্য পাওয়া যায়নি।

অবশ্য, অকেজো এই পিএবিঙ সচলকরণে সম্প্রতি উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানিয়েছেন হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান। এ বিষয়ে টেশিসকে চিঠি দেয়ার পাশাপাশি মোবাইলে কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৯৭ সালে স্থাপন করা হাসপাতালের পিএবিএঙ মেশিনটি ২০১৪ সালের মার্চ মাসে অকেজো হয়ে পড়ে। সচলকরণে দফায় দফায় চিঠি চালাচালির পর অবশেষে নতুন একটি পিএবিএঙ ক্রয়ে বরাদ্দ পায় চমেক হাসপাতাল। সাড়ে ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দে ২০১৫ সালের জুন মাসে নতুন একটি পিএবিএঙ মেশিন কিনে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টেশিস থেকেই এ মেশিন কেনা হয়।

চমেক হাসপাতালের টেলিফোন (পিএবিএঙ) শাখা সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে স্থাপন করা পিএবিএঙটি দীর্ঘ ১৬ বছরেরও বেশি সময় হাসপাতালেটিতে টেলিফোনের আন্তঃ সেবা দিয়ে আসছিল। হাসপাতালের প্রায় চারশ কক্ষে চারশটি টেলিফোনের আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে এ সেবা দিয়ে আসছিল পিএবিএঙটি। টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টেশিস) থেকে এটি কেনা হয়। কেনার সময় ১০ বছরের ওয়ারেন্টি দিয়েছিল সংস্থাটি। সে হিসেবে টেশিস কর্তৃক প্রদত্ত ওয়ারেন্টির মেয়াদ পেরিয়ে যায় ২০০৭ সালে। এরপরও দীর্ঘদিন এটি সচল ছিল এবং সেবা দিয়ে আসছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ঝড়ের সময় বজ্রপাতের ফলে এটি বিকল হয়ে পড়ে। টেলিফোন (পিএবিএঙ) শাখার তৎকালীন ইনচার্জ আব্দুল হক মিয়া জানানএটি বিকল হয়ে পড়ার পর টেশিসকে বিষয়টি জানানো হয়। ৪ এপ্রিল একজন সহকারি প্রকৌশলী পাঠায় প্রতিষ্ঠানটি। দেখার পর পিএবিএঙটির হার্ডডিস্ক ও এসেম্বলি নষ্ট হওয়ার কথা জানায় ওই প্রকৌশলী। অনেক পুরনো ও হার্ডডিস্ক নষ্ট হওয়ার কারণে মেশিনটি আর সারানো সম্ভব নয় বলে ওই প্রকৌশলী জানান। পরবর্তীতে নতুন মেশিন ক্রয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র শবে মেরাজ ১৮ ফেব্রুয়ারি
পরবর্তী নিবন্ধবকেয়া বাসা ভাড়া চাইতে গিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় আহত বাসার মালিক