পিআর ব্যবস্থা চালু হবে কি না তা ঠিক করবে জনগণ : সালাহউদ্দিন

| রবিবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

পিআর বা সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ভোট ব্যবস্থা চালু হবে কি না তা জনগণ ঠিক করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেছেন, আলোচনার টেবিল এবং আন্দোলনদুইটা যদি একই ইস্যুতে হয়, তাহলে এটা স্ববিরোধিতা। কেউ বলছেন, ‘পিআর চাই’; ঠিক আছে, পিআর যদি চাইতেই হয় সেটা তো ডিসাইড করবে জনগণ। আমরা কে কয়টা রাস্তায় মিছিল করলাম, বিভাগীয় পর্যায়ে কে কয়টা সভা করলাম, হাজার দুইতিনেক লোক নিয়ে মিছিল করলাম তাতে কি পিআর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল? গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে তারুণ্যের রাষ্ট্র চিন্তার তৃতীয় সংলাপে বক্তব্য দিচ্ছিলেন সালাহউদ্দিন। ‘মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষা ও শিক্ষাঙ্গন’ শীর্ষক এ সংলাপ আয়োজন করে অর্পণ আলোক ফাউন্ডেশন। খবর বিডিনিউজের।

বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আপনারা নির্বাচনি ইশতেহারে আপনাদের দাবিগুলো উল্লেখ করে নির্বাচনে আসুন। জনগণ যদি আপনাদের পক্ষে রায় দেয়, ইশতেহারের পক্ষে রায় দেয়, আপনারা সেটা বাস্তবায়ন করবেন। এটাই তো গণতান্ত্রিক রীতি।

সংকট সৃষ্টি না করার আহ্বান রেখে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমি সকল রাজনৈতিক দল এবং দেশবাসীকে আহ্বান জানাব, আসুন আমরা আর কোনো সংকটের সৃষ্টি না করি, আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমাদের ফ্যাসিবাদ বিরোধী যে জাতীয় ঐক্য গঠিত হয়েছে, সেটাকে আমরা সমুন্নত রাখি এবং এটাকে শক্তিতে পরিণত করে ইনশাআল্লাহ আমরা গণতান্ত্রিক চর্চাকে অব্যাহত রাখতে পারব এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে নির্মাণ করতে পারব। তাহলেই আমরা সফলকাম হবএকটা শক্তিশালী অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সম্পর্ক সম্পন্ন এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রবি নির্মাণের এবং আমাদের সকল শহীদের স্বপ্ন পূরণে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সরকার বিরোধী মনোভাবটা সবসময় জনগণের মধ্যে থাকে, যেকোনো ব্যর্থতার জন্য প্রথমেই সরকারের দিকে আঙ্গুল তোলেএজন্য সরকার দায়ী। দায়ী কি, দায়ী না সেটা পরে বিবেচ্য; কিন্তু প্রথমে বলে সরকার দায়ীযেহেতু দায়িত্বে সরকার। এই সরকারের দায়িত্বে আসাটা আমার মনে হয় সেটা তাদের (এনসিপি) সঠিক বিবেচনার সিদ্ধান্ত হয়নি। তাহলে আজকে প্রেসার গ্রুপ হিসেবে জাতিকে নির্দেশক হিসেবে একটা ভূমিকা তাদের থাকতে পারতো; যেটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এখনও তারা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে যারা সরকারে বসে আছে, প্রতিদিনই তাদেরকে লায়াবিলিটি কাঁধে নিতে হচ্ছে, হবে।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, কালকে কয়েকটা সমাবেশ হয়েছে বিভিন্ন বিভাগ পর্যায়ে। একটা পত্রিকায় আজকে হেডলাইন দেখলামকোথাও বলছে, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী সরকার গঠন করবে, বিএনপি বিরোধী দলে যাবে। তো ভাইসব আপনারা কি নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিএনপি বিরোধী দলে যাবে, নাকি জনগণ ঠিক করবে। কিন্তু আমার জবাবটা এখানে সেরকম না। আমার জবাব হলো, আপনারা যখন এত বেশি কনফিডেন্ট হলেন, আত্মবিশ্বাসী হলেন যেসরকারি দল হবেন; তাহলে নির্বাচনে আসেন না কেন? আজকে এই বাহানা, কালকে এই বাহানা, পরশু এই বাহানা দিয়ে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন কেন? উদ্দেশ্য কি সেটা তো আমরা জানিআরও একটু কিছুদিন পরে বলব।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কাদেরকে নিয়ে আপনারা আন্দোলন করছেন এখন যুগপৎ সঙ্গী হিসেবে, সেটা জনগণ দেখছে। তাদের মধ্যে একটি দল আছে; আমি নাম নিলে তো আবার অসুবিধা ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি আমিডামি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল। সাতটা দলের মধ্যে আপনারা নাম খুঁজে নেবেন। তারা যদি যুগপৎ এর সঙ্গী হলে নিষ্পাপ হয়, তাহলে বাকি যারা ২৮ টা দল ‘আমিডামি’ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গী হয়েছিল, তারা কি মহাপাপী? মানে আপনাদের সঙ্গী হলে যুগপৎএ তাদের কোনো পাপ নাই; এই নীতি সঠিক নয়। আর যারা ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় নাই, কিন্তু তার আগের সব নির্বাচনে যারা ‘হাত পাখা’ দিয়ে বাতাস করেছে, তারাও সঙ্গী। তাদের সম্পর্কে আমি বললাম বলে আমার উপরে মহা আক্রমণ।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একেকজন একেক রকমের দাবি নিয়ে আন্দোলনে যেতে পারেন, সবার গণতান্ত্রিক অধিকার আছে। আমরা বলছিলাম যেবিষয়গুলো এখনো আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তি হওয়ার অপেক্ষায়; সেজন্য অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করার জন্য কি আপনারা রাস্তায় গেলেন? সেই চাপকে আবার বাতাস শূন্য করার জন্য আমাদেরকেও তো যেতে হবে রাস্তায়, আন্দোলনে; সেটা কি আমরা এখন চাই? আমরা আলোচনার টেবিলে নিষ্পত্তি চাই। কারণ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা চর্চার মধ্য দিয়ে আছি রাজনৈতিক সংস্কৃতির, সেই চর্চা করতে করতে আমরা এইটাকেই ধারণ করব, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব জাতীয় ইস্যুতে, দেশের স্বার্থের ইস্যুতে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব গণতন্ত্রের ইস্যুতে, যেকোনো জাতীয় ইস্যুতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। কিন্তু গণতান্ত্রিক চর্চায় আমাদের মধ্যে বাহাস হবে, মতভিন্নতা হবে, বহুমত পোষণ করব; কিন্তু সেটার নিষ্পত্তি হবে আলোচনার টেবিলে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন বলেন, যদি কনস্টিটিউশনাল অর্ডার করেই এই জুলাই সনদের বাস্তবায়ন করতে হয়, এখন থেকেই সেটা কার্যকর করতে হয়; তাহলে তো দেশের দুইটা কনস্টিটিউশন বিরাজ করবে। এখন জুডিশিয়ারি কোনটা মানবে, প্রশাসন কোনটা মানবে; সেটার প্রশ্নটা নিয়ে আমরা যাই। দেখি সুপ্রিম কোর্ট কী বলে? এই কথা বলার পরে কেউ কেউ বললেন যে, সুপ্রিম কোর্ট যে ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে মতামত দিয়েছে সরকার গঠনের জন্যএটা নাকি সঠিক হয় নাই; কেউ কেউ বললেন যে, এটা প্রধানমন্ত্রীর মতামত ছাড়া যেতে পারে না। আমি বললাম যে, শেখ হাসিনার মতামতটা নেওয়া হয় নাই বলে কি আমরা দুঃখিত? যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার মতামতটা নিয়ে রাষ্ট্রপতি তারপরে পাঠাতেন সিগনেচার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে? বলে এই সরকার পুরোপুরি সাংবিধানিকও না, আবার বলছে, এটা পুরাপুরি বিপ্লবী সরকারও না, বলছে এটা মাঝামাঝি সরকার। আমি বললাম এটা নির্ধারণ হওয়া দরকার। এই বিতর্কটা কেন এক বছর পরে এসে তারা তুলছে, তার পেছনে একটা উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

তিনি বলেন, এই নৈরাজ্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক শূন্যতা যদি সৃষ্টি হয়, তাহলে বেনিফিশিয়ারি কে হবে? কোনো অসাংবিধানিক শক্তি। বেনিফিশিয়ারি হবে পতিত স্বৈরাচার, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে আমরা রাষ্ট্রকে সেই জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি কেন? এই প্রশ্নগুলো আমি উত্থাপন করেছিলাম। আর রাষ্ট্রপতির রেফারেন্স পাঠানোর এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। আপিলেট ডিভিশন তো প্রশ্ন করেনি যে, আপনি প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েছেন কি না, পরামর্শ নিয়েছেন কি না। কারণ পরিস্থিতি সেইরকমপ্রধানমন্ত্রী পালিয়ে গেছে; অবৈধ হলেও তো প্রধানমন্ত্রী। তাকে খুঁজে নিয়ে এসে কি আর সেই সাজেশন নিয়ে রাষ্ট্রপতি পাঠানোর অবস্থায় ছিল? ছিল না। সেই জন্যেই আপিল বিভাগ সেই প্রশ্ন তোলেনি।

সালাহউদ্দিন বলেন, কোনো কোনো দল কোনো কোনো দাবি করতেই পারে; সেটা জাতির উপরে জবরদস্তি আরোপ করা সঠিক নয়। এখন এনসিপি দাবি করছে, গণপরিষদ এবং জাতীয় সংসদের নির্বাচনে একই সাথে হওয়াই তো; সেই বিষয়টা আলোচনার টেবিলে আছে। ওখানেই আলোচনা হতে পারে। যদি সবাই মিলে সম্মত হয়। যদি ঐকমত্য পোষণ হয়, সেটা হবে? যদি ঐকমত্য পোষণ না হয়; তাহলে যেভাবে প্রচলিত বিধিবিধান, সবাই সম্মত হবে, সেভাবেই হবে। এখানে যেন আমরা পরস্পর জবরদস্তি না করি।

তিনি বলেন, যে পরিবর্তনগুলো আমরা সামনের দিনে আনতে চাচ্ছি, সেটা রাতারাতি হবে না। সেটার জন্য সময় দরকারপর্যায়ক্রমে, এভাবে যাওয়া দরকার। একটা গণতন্ত্রবিহীন অবস্থা থেকে আমরা যে জায়গায় আসতে পেরেছি ইনশাআল্লাহ এই গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চার মধ্য দিয়ে আমরা একটা শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারব। আমরা শহীদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারব, আমরা জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারব, আমাদের যে আকাঙ্‌ক্ষা আছেএকটা বৈষম্যহীন, সাম্যভিত্তিক, ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার; সেই আকাঙ্ক্ষা আমরা পূরণ করতে পারব।

অর্পণ আলোক ফাউন্ডেশনের সভানেত্রী বীথিকা বিনতে হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন আবদুস সালাম, জাতীয় নাগরিক পার্টিএনসিপির নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ, ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলাম খান, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামীম, এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমিরাতের ভিসা নিষেধাজ্ঞার নির্দেশনা নেই : রাষ্ট্রদূত
পরবর্তী নিবন্ধঅ্যাডভোকেট কমিশনের কাজ শুরু, বর্তমান অবস্থা জানাবে আদালতে