ইসলামী আন্দোলনের আমির (চরমোনাই পীর) সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, সংস্কার না করে নির্বাচন আয়োজন করে দেশকে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সংসদের উভয় কক্ষের পিআর পদ্ধতিতে ঐকমত্য না হলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। গতকাল শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে এ কথা বলেন চরমোনাই পীর। সংস্কার, বিচার ও সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে এ মহাসমাবেশের আয়োজন করে তারা যেখানে নির্বাচন ঘিরে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের সুর শোনা যায়। মহাসমাবেশ থেকে ১৬ দফা দাবি ঘোষণা দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। দলের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন। খবর বিডিনিউজের।
সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হয় দুপুর ২টায়। তার আগে থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থলে। এদিন সকাল ১০টায় কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় সমাবেশের প্রথম পর্ব। তাতে বক্তব্য দেন সারাদেশ থেকে আসা জেলা ও মহানগর পর্যায়ের নেতারা। দুপুর ২টায় মহাসমাবেশের মূলপর্ব শুরু হওয়ার আগেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় ভরে যায়।
সভাপতির বক্তব্যে চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, গণ–আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে। আগামী নির্বাচনে ইসলামী দলগুলো হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। আমি শুরু থেকেই ইসলামপন্থি সকল ভোট এক বাঙে আনার কথা বলছি। আগামী নির্বাচনে শুধু ইসলামী দলই নয়, বরং অনেক দেশ প্রেমিক রাজনৈতিক দল ‘এক বাঙ’ নীতিতে আসতে পারে। যদি কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে পারি, তবে বাংলাদেশে ইসলামপন্থিরাই হবে প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব আমাদের হাতেই আসবে।
ইসলামী আন্দোলন আমির বলেন, আমরা রাষ্ট্রে সুশাসন চাই। জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। যেখানে রাষ্ট্রপ্রধানও জনতার কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। আমরা ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা দক্ষ ও সৎ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে চাই। তিনি বলেন, আমরা নিঃস্বার্থভাবে এই সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছি। সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের যে অঙ্গীকার নিয়ে আপনারা দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকুন। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে লক্ষ থেকে বিচ্যুত হবেন না। নিরপেক্ষ থেকে দায়িত্ব পালন করুন। আমরা আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আজকের দিন এক ঐতিহাসিক দিন। মুসলিম উম্মার নেতৃত্বদানকারী সকল ইসলামী দল, ব্যক্তিত্ব ও স্কলারদের মধ্যে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও আজকে ঐতিহাসিক যে ঐক্যের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, মঞ্চে যারা বসে আছেন তারাই এই ঐক্যের মহাকাণ্ডারী। ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যের নতুন ইতিহাস সৃষ্টিকারীর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি বলেন, আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব বা পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন দেশের মানুষ গ্রহণ করবে না। প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ, কারো প্রতি পক্ষপাত করবেন না। জাতির স্বার্থে নিরপেক্ষ থাকবেন। দুই হাজার ছাত্র জনতার জীবন হাজার হাজার মানুষের রক্ত, ফাঁসি, ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আমরা ব্যর্থ হতে দেব না।
সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের দলীয় বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে বক্তব্য রাখেন– হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, বোধিজ্ঞান ভাবনাকেন্দ্রের সভাপতি দয়াল কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্মল রোজারিও, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম খান, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মূসা বিন ইজহার, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমাদ আবদুল কাদের, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব সাখাওয়াত হোসেন রাজী, জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দলটির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালাল উদ্দীন মহাসচিব, খেলাফত আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউসুফ সাদিক হক্কানী, এবি পার্টির সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু।